ডাক পেয়েছেন রানি এলিজাবেথের থেকেও, বাঙালিই মনে রাখেনি বিজ্ঞানী মাধবচন্দ্র নাথ-কে

ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যশালী বাকিংহাম প্যালেস। প্রাচীন দুর্গ, কত ইতিহাস, কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তার থেকেও বড়ো কথা, ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের রাজমহল। কাজেই ব্যবস্থাও সেরকম উচ্চ পর্যায়ের। তবে এদিন একটু ব্যস্ততা। বাকিংহাম প্যালেসের অলিন্দে পা রেখেছেন এক বাঙালি অধ্যাপক। স্বয়ং রানি এলিজাবেথ তাঁকে চা-পানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ভারতীয় বিজ্ঞানীর কাজ, মেধা তাঁকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু সেই বিজ্ঞানী কে? মাধবচন্দ্র নাথের নাম আমরা ক’জন শুনেছি?

ঢাকার বিক্রমপুরের এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছিলেন মাধবচন্দ্র নাথ। তাঁর ছেলেবেলা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। তবে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা দূর করে এগিয়ে গিয়েছিলেন নিজের মেধার জোরে। যেমন বুদ্ধি, তেমনই ছিল অধ্যাবসায়। সেটাই হয়ে ওঠে তাঁর আসল শক্তি। এই বিক্রমপুর থেকেই বিশ্বের মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছিলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। সেই পথে পা বাড়ালেন মাধবচন্দ্র নাথ… 

জৈব রসায়ন অনেক পড়ুয়ার কাছেই আতঙ্ক, আবার অনেকের কাছে পছন্দের জিনিস। সেই বিষয়টিকেই আপন করে নিলেন মাধবচন্দ্র। ১৯৩৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে জৈব রসায়ন নিয়ে ডি.এসসি. পাশ করেন। তার সঙ্গে ফিজিওলজি, নিউট্রিশন, ফার্মাকোলজির মতো বিষয়ও ছিল। এরপরই তাঁর জীবনে আসে নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে গিয়ে লক্ষ্য করেন, জৈব রসায়ন নিয়ে কোনো আলাদা বিভাগই নেই। আলাদাভাবে পড়াশোনা করার সুযোগই নেই। একাই উদ্যোগ নিলেন; এবং শেষ পর্যন্ত সফল হলেন। বাংলা থেকে দূরে গিয়ে, নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সূচনা করলেন বায়ো কেমিস্ট্রির পৃথক বিভাগ। মাধবচন্দ্র নাথই হলেন সেখানকার প্রতিষ্ঠাতা-বিভাগীয় প্রধান।

জৈব রসায়ন এবং তাঁর গবেষণার জগতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছিলেন তিনি। কাঁঠাল থেকে ‘আর্টোস্টেনন’ নামের একটি স্টেরয়েডাল ক্রিস্টাল বের করেছিলেন। এছাড়া মানব শরীরের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় গবেষণার ক্ষেত্রে মাধবচন্দ্র নাথের নাম উঠে আসবে। তার স্বীকৃতিস্বরূপ এশিয়াটিক সোসাইটির পক্ষ থেকে এলিয়ট পুরস্কার, রয়্যাল ইন্সটিটিউট অফ কেমিস্ট্রি এবং ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট কেমিস্টসের ফেলোশিপ ইত্যাদি বহু সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। একটা সময় বেঙ্গলি এডুকেশন সোসাইটির সহ-সভাপতি, পরবর্তীতে সভাপতিও হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন
৫৮ বছর আগেও চিন-ভারত যুদ্ধে ভারতের ট্রাম্প কার্ড তিব্বতী সেনারা, পরিকল্পনায় এক বাঙালি

এমন একজন ব্যক্তিকে সম্ভ্রমের সঙ্গেই চা-পানের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ। নিজের ক্ষমতায়, মেধায় এই উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন মাধবচন্দ্র নাথ। অথচ আজ বিস্মৃতপ্রায় একটি নাম তিনি। বাংলার জৈব রসায়ন নিয়ে গবেষণায় তাঁর অবদান অস্বীকার করতে পারবে না বিজ্ঞান। কিন্তু নিজের জন্মস্থানেও কি তাঁকে কেউ মনে রেখেছে? জানা নেই উত্তর। আরও অনেক বিস্মৃতির ভিড়েই ডুবে আছেন অধ্যাপক মাধবচন্দ্র নাথ।

তথ্যসূত্র – ১। বিক্রমপুর কথকতা
২। Indian National Science Academy

আরও পড়ুন
তারাতলা থেকে উদ্ধার নরকঙ্কাল; ‘সুপার ইম্পোজিশন’-এর সাহায্যে জট ছাড়ালেন বাঙালি ডাক্তার

Powered by Froala Editor

More From Author See More