ফ্রাঙ্ক বাউমের বই থেকে ছবি নিয়ে ‘আবোল তাবোল’-এ ব্যবহার করলেন সুকুমার রায়

ওই যে কানসাস শহরে ডরোথি নামে একটা মেয়ে ছিল না, যে কিনা তাঁর কাকু কাকিমার সাথে থাকত, সঙ্গী টোটো নামের এক কুকুরছানা... একদিন হল কি, এক ভয়ানক ঝড় এসে ওঁকে বাড়িশুদ্ধ উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলল আজব এক দেশে। সে দেশে ছোট্ট ছোট্ট মাঞ্চকিনদের বাস। আর আছে উত্তরের ভাল ডাইনি, পশ্চিমের দুষ্টু ডাইনি... ডরোথি বাড়ি ফিরতে চায়। কিন্তু সে ব্যবস্থা করতে পারে একমাত্র একজন - ওজের জাদুকর।

তাই ডরোথির যাত্রা শুরু হয় ওজের দেশের উদ্দেশ্যে। পথে দেখা হয় এক কাকতাড়ুয়ার সঙ্গে, তাঁর নাকি মাথায় কোনো বুদ্ধি নেই, এক টিনের তৈরি মানুষের সাথে, যার হৃদয় নেই আর এক বিশাল সিংহের সঙ্গে যার বুকে সাহস নেই। প্রতি মুহূর্তে ভয়। পশ্চিমের সেই দুষ্টু ডাইনি কি ক্ষতি করে বসে। তারপর কী হল, তা সব্বার জানা।

১৯০০ সালে প্রথম সার্থক মার্কিন রূপকথা রচনা করেন ফ্রাঙ্ক বাউম। থিয়েটার, ব্যাঙ্কের ব্যবসা কিছুতেই ঠিক জুত করতে পারছিলেন না যখন, তখন আচমকা বই লেখার এই আইডিয়া। সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করেন বন্ধু ডেন্সলো - তাঁর অপূর্ব তুলি কালির জাদুতে। পরে The Wonderful Wizard of Oz থেকে বানানো হলিউড চিত্রও ইতিহাস সৃষ্টি করে। মজার ব্যাপার, নারীদের শক্তিশালী নেতা হিসেবে দেখানোর জন্য ১৯০০ সালে প্রকাশিত এই বইটি বহুবার যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়েছে। ১৯২৮ সালে বইটি প্রথম নিষিদ্ধ হয় শিকাগোর পাবলিক লাইব্রেরিগুলোতে, পরে সেটা আরো অনেক জায়গায় নিষিদ্ধ হয়। এমনকি বইটি সম্পর্কে এখনও মানুষ ধারণা করেন যে কালো জাদু বা ডাকিনীবিদ্যাকে উৎসাহিত করতে লেখা হয়েছিল বইটি।

আমরা বাঙালিরা অজান্তেই ডেন্সলো-র আঁকা এই বইয়ের একটা ছবি দেখে দেখে বড়ো হয়েছি। কোনটা? আবোল তাবোল- বইয়ের মূল সংস্করণে একটা মজা করেছিলেন সুকুমার। রামগরুড়ের ছানা, যাদের হাসতে মানা, সেই কবিতার ঠিক পরের কবিতাই ছিল ‘আহ্লাদী” যাতে তিনজন মিলে বেজায় হাসছে আর বলছে “হাসছি মোরা হাসছি দেখো”। এই তিন আহ্লাদীর ছবিতে সুকুমার সোজা ১৯০০ সালে প্রকাশিত Wizard of Oz এর ডেন্সলোর আঁকা কোয়াডলিং-এর ছবিখানা একেবারে ব্লক কেটে বসিয়ে দিলেন। যে ডামি কপিটি এখনও আছে, তাতে পরিষ্কার নির্দেশ – ‘ব্লক কেটে বসবে।’

আমাদের অজান্তেই আর একটা ছবি একেবারে বিদেশি ছবি কেটে বসানো। সেটার কথাও বলা উচিত। ১৩২৬ সালের বৈশাখে সুকুমার যখন সন্দেশে কাঁদুনে লিখলেন, তখন তার রূপ আর যখন তা পাকাপাকি বইতে গেল, তার রূপে বিস্তর তফাত। শুধু তাই না, মূল ছবিতে কাঁদুনে বাচ্চা, তার মা (বা আয়া), একটি কুকুর ছাড়াও পাইপ মুখে এক মানুষকে দেখা যায়। খুব সম্ভব ইনিই বুথ সায়েব। যদিও সন্দেশে প্রকাশিত কবিতায় বুথ সায়েবের নামটিও নেই...

এই ভদ্রলোকের যেন কোনো ধারণাই নেই, কেন এই বাচ্চা কাঁদছে। তাঁর পাইপ থেকে ওঠা ধোঁয়ার কুণ্ডলি তাই এক বিশাল প্রশ্নচিহ্ন হয়ে রয়েছে। কিন্তু বইয়ের ছবিতে সায়েবকে ছেঁটে ফেলেছেন সুকুমার, কিন্তু তাঁর নামটা দিয়েছেন এখানে। তবে নাম দিলেও একেবারে শেষে বুথ সায়েবের ছবি কেন বাদ গেল সে রহস্যের কোনো উত্তর নেই... নিশ্চিতভাবে এই ছবিও নতুন করে আঁকেননি সুকুমার।

ঋণ -
The Annotated Wizard of Oz (Centennial Edition) WW Norton
আবোল তাবোল (সিদ্ধার্থ ঘোষ সম্পাদিত)- সুবর্ণরেখা

Powered by Froala Editor