প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত পরিবারও, অথবা প্রকাশনাই ‘পরিবার' ধানসিড়ির শুভ-র কাছে

কিছু প্রকাশনা সংস্থা তাদের আন্তরিকতায় আলাদা হয় বাকিদের থেকে। বইমেলার ভিড়ে, বইমেলার মুখেদের মাঝেও তাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। এমনই এক প্রকাশনা ধানসিড়ি। যেখানে সহযোদ্ধারা আসলে সকলে একই পরিবারের। প্রকাশক থেকে প্রচ্ছদশিল্পী, এমনকি বিপণনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরাও একটি বৃহত্তর পরিবারের অংশ। ধানসিড়ি বাংলার এক ঘরোয়া প্রকাশনা। শুভ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেঁজুতি বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বামী-স্ত্রী মিলে তিলতিল করে গড়ে তুলেছেন ধানসিড়ি। নিজেদের সঞ্চয়ের টাকা থেকে খুলেছেন কলেজস্ট্রিটের আস্তানা।

ধানসিড়ি ইতিমধ্যেই অন্যতম জনপ্রিয় প্রকাশনা। যদিও খুব সঙ্কোচের সঙ্গে শুভ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, এখনও অনেক পথ যাওয়া বাকি। কিন্তু এই ঘরোয়া পরিবেশে কাজ করার সুবিধা-অসুবিধা কেমন?

শুভ ধানসিড়ির প্রকাশক, স্ত্রী সেঁজুতি প্রচ্ছদশিল্পী। বিপণনের দায়িত্বে আছেন শুভঙ্কর ও বিশ্বরূপ। তাঁরাও ভরপুর এই পরিবারেরই অংশ। শুভ মনে করেন, এই পরিবেশের সুবিধা-অসুবিধা দুই দিকই আছে। একটি পরিবার একসঙ্গে কাজ করার ফলে যেমন অনেক বেশি অ্যাটাচড থাকতে পারেন, অনেক মতামতই মিলে যায় তাঁদের, তেমনই রয়েছে কিছু অসুবিধার দিকও। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাজের খুঁটিনাটি খোঁজখবর রাখতে হয়। প্রকাশক শুভ বন্দোপাধ্যায় আর মানুষ শুভ বন্দোপাধ্যায়ের মধ্যে পার্থক্য টানতে হয় সময়ে সময়ে। তিনি নিজে যেমন সারাদিন রক্তঘাম ঝরিয়ে পরিশ্রম করছেন, তেমনই করছেন পরিবারের বাকিরাও। কিন্তু কাজের কোনো ভুল ত্রুটি হলে সমস্ত পরিশ্রম দেখেও প্রকাশকের কাজ সেসবের সমালোচনা করা। সেকারণে বাকিরাও চিন্তিত থাকেন, কীভাবে রিঅ্যাক্ট করবেন শুভ। "এখানে সম্পর্কের যে একটা বড়ো ভূমিকা আছে, সেটা ঠিকমতো মেনটেইন করতে হয়।" তবে সব মিলিয়ে গত আট বছরে ধানসিড়ির পারফরম্যান্স বেশ ভালো, এবং তার পিছনে পরিবারের সকলের অবদানই কমবেশি সমান, জানান শুভ।

শুভ বলেন, এখনও কাজ করতে করতে সেই প্রথম দিনেই পৌঁছে যান তিনি। এই কয়েক বছরে কী কাজ করেছেন, কতটা খ্যাতি পেয়েছেন প্রকাশনার জগতে, সেইসব ভুলে যেতে হয়। 'ধানসিড়ি'কে প্রথম সারির প্রকাশনা বললে বেশ অস্বস্তিতে পড়েন তিনি। একবছর পেরোল ধানসিড়ির কলেজ স্ট্রিট আস্তানা। তবে কলেজ স্ট্রিটের উপস্থিতি বইমেলার বিক্রিতে তেমন ছাপ ফেলেনি। আগের বছরগুলোর তুলনায় এ-বছর স্টলের আয়তনও বেশ বড়ো। "সমস্ত বই সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা যাচ্ছে। ফলে পাঠকদের বই দেখতে সুবিধা হচ্ছে। অনেকেই আবার বইমেলায় এসে বই দেখে বলে যাচ্ছেন পরে কলেজ স্ট্রিটের ঠিকানা থেকে সংগ্রহ করে নেবেন।" ধানসিড়ি ক্রমশ আরও বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তবে আরও অনেকদূর যেতে হবে বলে বিশ্বাস করেন শুভ। বইমেলা সেই সুদূর পথের সবচেয়ে বড়ো দরজা।