ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের কবলে ইথিওপিয়া, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ, চলছে ‘মিলিটারি-শাসন’ও

আফ্রিকায় আবার যেন ফিরে আসছে দুর্ভিক্ষের অন্ধকার যুগ। সুদানের পর এবার ইথিওপিয়া। ইথিওপিয়ার এক সরকারি আধিকারিকের লেখা চিঠি ফাঁস হওয়ার পরই প্রকাশ্যে এল এই দেশের সাম্প্রতিক অবস্থা। টাইগ্রে অঞ্চলে ইতিমধ্যেই অনাহারে মারা গেছেন কয়েক হাজার মানুষ, আশঙ্কায় আরও কয়েক লক্ষ। শুধু দুর্ভিক্ষই নয়, সুদানের সাম্প্রতিক মানবিক পরিস্থিতিকেও ‘সংকটজনক’ বলেই অভিহিত করছে জাতিসংঘ।

গত নভেম্বর মাসে ইথিওপিয়ার টাইগ্রে অঞ্চলে জয় ঘোষণা করে ফেডেরাল সরকার। তবে খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি এই সরকার। নভেম্বরেই ইথিওপিয়ার সামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী অনুপ্রবেশ করে ক্ষমতা দখল করে অঞ্চলের। আঞ্চলিক রাজধানী সেনাবাহিনীর আওতায় চলে যাওয়ার পর পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের সঙ্গে নিয়মিত সংঘাত লেগে রয়েছে ইথিওপীয় সেনাদের।

একদিকে যেমন গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতির কারণে চরমে পৌঁছেছে খাদ্যাভাব, তেমনই চলছে লুঠতরাজ, জাতিগত হিংসা, হত্যা, ধর্ষণ। এমনকি শরণার্থী হিসাবে এরিত্রিয়ায় পালিয়ে যাওয়া নাগরিকদের বলপূর্বক ফিরিয়ে আনা হচ্ছে দেশে। তারপর তাঁদের ওপরে চলছে অত্যাচার।

জাতিসংঘের কাছে টাইগ্রে এমার্জেন্সি কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (ইসিসি) জানিয়েছে, জরুরি অবস্থায় খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন এই অঞ্চলের সাড়ে চার কোটি মানুষের। ইতিমধ্যেই খাদ্যের অভাব এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতির দরুন ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ শরণার্থী হয়ে পালিয়েছেন দেশ থেকে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সরকারি সেন্টারে একটি মাত্র বিস্কুটের জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছেন কাতারে কাতারে মানুষ। কেউ কেউ আবার মারা যাচ্ছেন ঘুমের মধ্যেই।

তবে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী গত নভেম্বরেই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, পরিস্থিতি চলে এসেছে আয়ত্তের মধ্যে। তবে বাস্তব অবস্থা তার ধারেকাছেও নয়। কিন্তু সাহায্য-প্রেরণই হোক কিংবা হিংসার মধ্যস্থতা— কোনোটার জন্যই এখনও পর্যন্ত ওই অঞ্চলে যোগাযোগ করে উঠতে পারছে না জাতিসংঘ। কারণ পরিকল্পনা-মাফিকই বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে সমস্ত ফোনের লাইন, বন্ধ করে রাখা হয়েছে ইন্টারনেটও। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন ইথিওপিয়া। উপায়ন্ত না থাকায় মৃত্যুর জন্যই প্রহর গুনছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। কীভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে সাহায্য, তার কোনো ধারণাই পাচ্ছেন না বিশ্বের দুর্ভিক্ষ বিশেষজ্ঞরা...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চরমতম দুর্ভিক্ষ সুদানে, খিদের জ্বালায় মৃত্যুমুখে অসংখ্য শিশু

More From Author See More