দেশের প্রথম ভোটদাতা তিনি, ১০৩ বছরেও 'দায়িত্ব' ভোলেননি শ্যামস্মরণ নেগি

বছরের প্রথম মাসেই হিমাচলপ্রদেশে শুরু হয়ে গিয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ত্রিস্তর নির্বাচনের প্রথম দিন, রবিবার যথারীতি নির্বাচন বুথে হাজির হয়েছেন সবাই। তবে সবার থেকে আলাদা করে গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ। তাঁর জন্য বুথের সামনে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে লাল কার্পেট। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা উপস্থিত থেকে তাঁর মাথায় তুলে দিলেন কিন্নরী টুপি। অবশ্য ১০৩ বছর বয়সেও শুধুই নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের ইচ্ছা নিয়ে নির্বাচনকেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন শ্যামস্মরণ নেগি। তবে তাঁর প্রতি এই বিশেষ অভ্যর্থনার কারণ জানতে হলে আরও খানিকটা পিছিয়ে যেতে হবে। আজ থেকে ৭০ বছর আগে, যখন বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো গণতন্ত্রের জন্মলগ্ন।

সংবিধান লেখার পরপরই মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা চরমে উঠেছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বদলে এবার তৈরি হবে জাতীয় সরকার। আর সেই সরকার তৈরি করবেন দেশের প্রতিটা মানুষ, নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দিন স্থির করা হয়েছিল। কিন্তু হিমাচলপ্রদেশের ঠান্ডায় ওই সময় নির্বাচন প্রক্রিয়া চালানো আদৌ সম্ভব হবে কিনা, সে-বিষয়ে সন্দেহ ছিল কমিশনের। আর তাই এই একটি রাজ্যে নির্বাচন হয়ে গিয়েছিল আগেই। ২৩ অক্টোবর। ভোটদানের হার অবশ্য বেশ কম ছিল। নতুন এই প্রক্রিয়ায় মানুষের অভ্যস্ত হতে তো সময় লাগবেই। তাছাড়া হিমাচলপ্রদেশের অধিকাংশ আদিবাসীর সঙ্গে বাইরের পৃথিবীর যোগাযোগ খুবই কম। এই সময় সবাইকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়ে প্রথম ভোট দিলেন স্থানীয় একজন স্কুল-শিক্ষক। তিনি আর কেউ নন, শ্যামস্মরণ নেগি। ১৯১৭ সালে জন্ম। প্রথম ভোটদানের সময় বয়স ৩৪। ভারতীয় গণতন্ত্রের তিনিই প্রথম নির্বাচক।

এই ৭০ বছরে একটিও নির্বাচন বাদ দেননি শ্যামস্মরণ। পঞ্চায়েত ভোট হোক বা বিধানসভা কিম্বা লোকসভা; সবার আগে তিনি ছুটে গিয়েছেন নির্বাচনকেন্দ্রে। শরীর বয়সের ভারে ভেঙে পড়েছে। কিন্তু তাতে কী? বয়স তো একটা সংখ্যামাত্র। দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব তো সমস্ত নাগরিকের। আজও নিজের দায়িত্ব ভোলেননি তিনি। ‘সনম রে’ সিনেমায় ছোট্ট একটি দৃশ্যে যে মানুষটির মুখ একবার দেখা গিয়েছিল পাহাড়ি রাস্তায়, তাঁর জীবনের সঙ্গেই যে এমন একটা ইতিহাস জড়িয়ে সে-কথা ভাবলে সত্যিই অবাক লাগে।

Powered by Froala Editor