বছর পেরিয়েও সুস্থ অ্যানিমিয়া ও থ্যালাসেমিয়া রোগীরা, আশা জাগাচ্ছে ক্রিস্পার প্রযুক্তি

চলতি বছর নোবেল পুরস্কারের তালিকায় রসায়ন বিভাগে দেখা গিয়েছিল জেনিফার ডাউডনা এবং ইম্যানুয়েল শার্পেন্টিয়ারের নাম। ক্রিস্পার নামে এক অভিনব প্রযুক্তি আবিষ্কারের জন্যই নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁরা। কিন্তু কী এই ক্রিস্পার? এই প্রযুক্তির সাহায্যে যে কোনো জিনকে সহজেই পরিবর্তন করে ফেলা যায়। শুনতে কল্পবিজ্ঞানের গল্পের মতো লাগলেও আসলে এটি নিখাদ বিজ্ঞান। কিন্তু আদৌ কি সম্ভব এই জিনগত পরিবর্তন? কী বলছে গবেষণা?

২০১৪ সালে আবিষ্কার হয়েছিল এই প্রযুক্তি। অবশ্য পেটেন্ট সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন তার কোনো পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সম্ভব হয়নি। ২০১৮ সালে সেই জটিলতার মীমাংসা হলে শুরু হয় পরীক্ষানিরীক্ষা। এমন একটা আবিষ্কারকে ব্যবহার করে নানারকম অনৈতিক কাজও করা যায়। তবে সবদিক বিবেচনা করে আপাতত কেবল জিনগত রোগ সারানোর জন্যই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এর জন্য প্রথমেই গবেষকরা বেছে নিয়েছেন সিকল সেল অ্যানিমিয়া এবং ট্রান্সফিউশন-ডিপেন্ডেন্ট থ্যালাসেমিয়াকে। এই দুই রোগেরই একমাত্র চিকিৎসা কোনো নিকট আত্মীয়ের সাহায্যে অস্থি-মজ্জ্বা পুনঃস্থাপন। তবে এর খরচ এবং অন্যান্য জটিলতার কারণে অনেকেই সুচিকিৎসা পান না। প্রথমে নিয়মিত রক্ত পরিবর্তনের ফলে কিছুটা সুস্থ রাখা গেলেও ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান রোগী। তবে জীবিত কোষের জিনে সামান্য পরিবর্তন ঘটাতে পারলেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

প্রথম পরীক্ষাটি হয় আজ থেকে ১৫ মাস আগে। রোগীর শরীরে বাসা বেঁধেছিল ট্রান্সফিউশন-ডিপেন্ডেন্ট থ্যালাসেমিয়া। এর ৩ মাসের মধ্যেই সিকল সেল অ্যানিমিয়া আক্রান্ত রোগীর উপরেও একই পরীক্ষা করা হয়। এক বছর পরেও দুই ক্ষেত্রেই রোগী সুস্থ আছেন। এমনকি এর মধ্যে কাউকে নতুন করে রক্ত নিতেও হয়নি। অতএব এই দুই ভয়ঙ্কর রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ এখন সত্যিই সহজ। আর এই একই পদ্ধতিতে অন্যান্য জিনগত রোগেরও চিকিৎসা সম্ভব। তবে কি ক্যানসারের চিকিৎসাও শুধু সময়ের অপেক্ষা? তার উত্তর পেতে যদিও এখনও পরীক্ষার প্রয়োজন।

Powered by Froala Editor