নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়ায় রেকর্ড পরিমাণ শক্তি নিষ্কাশন, খুলল পদার্থবিদ্যার নতুন দিগন্ত

প্রায় আট দশক আগের কথা। পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভয়াবহ যুদ্ধাস্ত্র তো বটেই, বিকল্প জ্বালানিরও অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। নিউক্লিয় বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে আরও উচ্চতর শক্তির অনুসন্ধান থেমে থাকেনি। সেই পথ ধরেই এসেছিল নিউক্লিয় সংযোজন বা হাইড্রোজেন বোমার ধারণা। এবার সংযোজন শক্তির অনুসন্ধানেই নতুন মাইলফলক তৈরি করলেন লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা। ল্যাবরেটরিতে রেকর্ড পরিমাণ শক্তি নিষ্কাশন করলেন হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে।

সূর্য কিংবা যে-কোনো নক্ষত্রেরই শক্তির উৎস নিউক্লিয় সংযোজন (Fusion Reaction) বিক্রিয়া। সাধারণত হাইড্রোজেনের ডয়টেরিয়াম এবং ট্রিটিয়াম— এই দুটি আইসোটোপের সংযোজনেই বিপুল পরিমাণ তাপীয় শক্তি নির্গত হয়। এবার ল্যাবরেটরিতে হাইড্রোজেনের সংযোজনে ১.৩ মেগাজুল শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম হলেন পদার্থবিদরা। যা আগের তুলনায় প্রায় ২৫ গুণ। ফলে, আগামীতে শক্তির চাহিদা মেটাতে এই বিক্রিয়াই কার্বনের বিকল্প জ্বালানি হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু কীভাবে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন তাঁরা?

সাধারণত পেনসিল রাবারের আয়তনের ছোট্ট সোনার প্রকোষ্ঠের মধ্যেই স্থাপন করা হয় হাইড্রোজেন জ্বালানির ক্যাপসুল। তারপর সেই প্রকোষ্ঠকে উত্তপ্ত করা হয় লেসার রশ্মির মাধ্যমে। লেসার রশ্মি সোনার দেওয়ালে আঘাত করার পর তৈরি হয় এক্স-রে। পারতপক্ষে এই এক্স-রেই পারমাণবিক সংযোজন বিক্রিয়া শুরু করার চাবিকাঠি। 

না, ল্যাবরেটরিতে সংযোজন বিক্রিয়ার এই পদ্ধতিতে গবেষকরা বদল আনেননি কিছু। শুধু বদলেছেন যান্ত্রিক পরিকাঠামো। সোনার প্রকোষ্ঠটির আকারের পরিবর্তনেই বাজিমাত করেন গবেষকরা। সাধারণত, লেজার রশ্মি এক্স-রেতে পরিণত হওয়ার সময়ই বড়ো পরিমাণ শক্তির অপচয় হয়। সোনার প্রকোষ্ঠটির আকারের পরিবর্তনের মাধ্যমে সেই শোষণের পরিমাণই কমিয়ে আনেন গবেষকরা। স্বাভাবিকের থেকে পাঁচগুণ কম শক্তি সরবরাহ করেই নিষ্কাশন করেন রেকর্ড পরিমাণ তাপীয় শক্তি। বদল আনা হয়েছিল শক্তি সরবরাহের প্রক্রিয়াতেও। বিভিন্ন দিক থেকে ১৯২টি লেজার উৎসকে ব্যবহার করা হয়েছিল জ্বালানি ক্যাপসুলটিকে উত্তপ্ত করার কাজে। 

আরও পড়ুন
জল ছাড়াই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, অত্যাধুনিক পারমাণবিক চুল্লি তৈরির পথে চিন

এক সেকেন্ডেরও কয়েক বিলিয়ন ভাগ সময়ের মধ্যেই ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৌঁছায় হাইড্রোজেনের ক্যাপসুলটি। যা, পারতপক্ষে নক্ষত্রের কেন্দ্রের ক্ষুদ্রতম সংস্করণ। সম্প্রতি প্লাজমা পদার্থবিদ্যার এপিএস বিভাগের ৬৩তম বার্ষিক সম্মেলনে প্রকাশ করা হয় এই গবেষণাপত্রটি। এই প্রযুক্তি শক্তির সন্ধান তো বটেই, আগামীদিনে সূর্য এবং অন্যান্য নক্ষত্রের চরিত্র বুঝতেও যথেষ্ট সাহায্য করবে বিজ্ঞানীদের।

আরও পড়ুন
ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষাক্ত জল ফেলা হবে সমুদ্রে, বিতর্কিত সিদ্ধান্ত জাপানে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চের্নোবিলের তিন দশক আগেই ঘটেছিল বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক দুর্ঘটনা