পারমাণবিক অস্ত্রে ‘না’, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ৫০ দেশের

আজও আগস্টের ক্ষত বয়ে চলেছে হিরোশিমা আর নাগাসাকির ইতিহাস। চের্নোবিল থেকে ফুকুশিমা, আজও পারমাণবিক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চলেছে পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তবে সেই দীর্ঘ তালিকায় এবার ইতি ঘটাতে চলেছে জাতিপুঞ্জ। পৃথিবীর মোট ৫০টি দেশকে নিয়ে সাক্ষরিত হল একটি চুক্তিপত্র। আর ৩ মাসের মধ্যেই সেই চুক্তি কার্যকর হতে চলেছে। চুক্তি অনুযায়ী এই ৫০টি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা পরীক্ষানিরীক্ষা কোনোকিছুতেই অংশ নেবে না।

৫০তম দেশ হিসাবে চুক্তিপত্রে সম্প্রতি সাক্ষর করল হন্ডুরাস। নিজস্ব নিউজলেটারে সেই খবর প্রকাশ করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ। আর সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে এই চুক্তি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন আধিকারিকরা। যদিও এই চুক্তিপত্র নিয়ে নেতিবাচক সমালোচনাও জানাচ্ছেন অনেকে। যে ৫০টি দেশ এই চুক্তিপত্রে সাক্ষর করেছে তারা কেউই সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী নয়। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ইংল্যান্ড বা কানাডা চুক্তিতে সাক্ষর করেনি। আমেরিকা তো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ন্যাটো চুক্তির আওতায় থাকা কোনো দেশই এই চুক্তি মেনে নেবে না। এমনকি জাতিপুঞ্জের সঙ্গে অসহযোগিতার কথাও জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে এই চুক্তি শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কতটা সফল হবে, তাই নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

যদিও নিছক প্রতীকী নয়, বরং বাস্তব ক্ষেত্রেই এই চুক্তি কার্যকর হতে পারে বলে আশাবাদী অনেকে। ২০১৭ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী সংস্থা ইন্টারন্যাশানাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স-এর তরফ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুর্বল দেশগুলির এভাবে এগিয়ে আসা খুব তাড়াতাড়ি শক্তিশালী দেশগুলিক বাধ্য করবে পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করতে। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দলাই লামাও। আর একটা হিরোশিমা বা নাগাসাকি দেখতে ইচ্ছুক নন কেউই। লামার কথায় উঠে এসেছে সেই শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর বার্তাই।

২০১৭ সাল থেকেই এই চুক্তিপত্রের প্রস্তুতি শুরু করেছিল জাতিপুঞ্জ। নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি তাতে সাক্ষর করেছে মেক্সিকো, ভিয়েতনাম এমনকি বাংলাদেশও। আর হিরোশিমা-নাগাসাকি বিস্ফোরণের ৭৫তম বছরে তাতে শেষ সাক্ষর করল হন্ডুরাস। ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি থেকেই এই ৫০টি দেশে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হবে। আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই উদ্যোগ সত্যিই ঐতিহাসিক। তবে শক্তিধর দেশগুলি এগিয়ে না এলে সেই শান্তির আহ্বান যে অচিরেই ব্যর্থ হবে, সেকথা বলাই বাহুল্য।

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More