পরিণত বয়সেও কাটে না শৈশবাবস্থা, অদ্ভুত ‘বেবি ড্রাগন’দের গল্প

এক-একটি প্রাণীর বয়স ৬০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত। অথচ তাদের শৈশবদশা পেরোয়নি। তার মানে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই যে, আরও কয়েকশো বছর আয়ু এই প্রাণীদের। বস্তুত মৃত্যুর সময়েও শিশু অবস্থায় থাকে বেবি ড্রাগন (Baby Dragons)। হ্যাঁ, এই অদ্ভুত চরিত্রের জন্যই এমন নামকরণ। গোটা পৃথিবীতে একমাত্র একটি গুহায় দেখা যায় স্যালামান্ডার গোত্রের এই প্রাণীদের। পূর্ব ইউরোপের স্লোভানিয়ার (Slovenia) পোস্তোজনা গুহায় অদ্ভুত এই প্রাণীকে দেখতে ভিড় জমান বহু পর্যটক। এমনকি তাদের নিয়ে নানা রূপকথার গল্পও প্রচলিত। কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপের নানা দেশের মানুষ প্রায় তীর্থদর্শনের মতো ভিড় জমিয়ে আসছেন এখানে। তবে প্রাণীটির চরিত্র এখনও বিজ্ঞানীদেরও অবাক করে।

ঠিক কবে পোস্তোজনা গুহায় এই সরীসৃপের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তা যদিও জানা যায় না। তবে গুহায় একটি গ্রাফিটি থেকে অনুমান করা হয়, ১২১৩ সালেও এই গুহায় মানুষের পা পড়েছে। ১৮১৮ সালে অস্ট্রিয়ার রাজা প্রথম ফ্রানৎজ এসেছিলেন গুহা পরিদর্শনে। আর তারপর থেকেই পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে।

কেবল উনিশ শতকেই এই গুহায় অন্তত ৩.৫ কোটি মানুষ এসেছেন। আর বিশ ও একুশ শতকে পর্যটকের সংখ্যাটা যে আরও বেড়েছে, সে-কথা বলাই বাহুল্য। গুহার মধ্যেই গড়ে উঠেছে একটি অ্যামিউজমেন্ট হল। সেখানে অর্কেস্ট্রার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আর এই সবই হয়েছে বেবি ড্রাগন নামের এই প্রাণীকে ঘিরে। প্রাণীদের একেবারে শৈশব দশায় যেমন দৃষ্টিশক্তি থাকে না, এই সরীসৃপ মৃত্যুর সময় পর্যন্ত থাকে অন্ধ। তাদের চোখ থাকে ঠিকই, কিন্তু চোখের ওপর থাকে মোটা চামড়ার স্তর। এমনকি সরীসৃপ হওয়া সত্ত্বেও তাদের শরীরে আঁশ বা খোলস তৈরি হয় না। গোলাপি রঙের নরম চামড়ায় ঢাকা থাকে শরীর। দেখে মনে হয় এই বুঝি ডিম ফেটে বেরিয়ে এসেছে তারা।

শোনা যায়, বাইবেল বর্ণিত ভয়ঙ্কর বন্যায় ভেসে গিয়েছিল পোস্তজনা গুহা। তার আগে এখানেই ছিল ড্রাগনদের বাস। বন্যায় ড্রাগনদের মৃত্যু হলেও তাদের সন্তানরা থেকে যায়। এমনটাই মনে করেন অনেকে। তবে বেবি ড্রাগন সম্পর্কে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্যটি আবিষ্কার হয়েছে ২০১৬ সালে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, জন্মের সময় দৃষ্টিশক্তি নিয়েই জন্মায় এই প্রাণীরা। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের চোখের ওপর চামড়ার আবরণ পড়ে যায়। এমন অদ্ভুত অভিযোজন কেন, তার উত্তর পাননি বিজ্ঞানীরা। তবে পৃথিবীতে আশ্চর্য প্রাণীর সংখ্যা তো নেহাত কম নয়। জীবজগতের রহস্যের কতটুকুই বা বিজ্ঞানীদের জানা!

আরও পড়ুন
রাস্তার প্রাণীদের আইনি সুরক্ষা দিতে লড়াই দিল্লির স্টার্টআপের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
‘অস্ট্রিয়া জীবনানন্দাই’, জীবনানন্দ দাশের নামে নামকরণ হল প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর