মিলল ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাক হোলের প্রমাণ, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

বছর চারেক আগে প্রমাণ পাওয়া যায় তার অস্তিত্বের। তখনই বোঝা যায় যে, আর পাঁচটা ব্ল্যাক হোলের (Black Hole) থেকে সে আলাদা। কারণ নিজের কক্ষে অনবরত ঘুরে চলেছে সে। আর সম্প্রতি পাওয়া গেল তার পাকাপোক্ত প্রমাণ। চিন, জাপান, ইতালি এবং আমেরিকার বিজ্ঞানীদের একটি দলের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে লাট্টুর মতো ঘুরছে ব্ল্যাক হোলটি। যার একটি চক্র পূর্ণ হতে লাগে এগারো বছর। 

পৃথিবী থেকে ৫৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সি মেসিয়ের ৮৭ (Messier 87)। সংক্ষেপে বলা হয় এম৮৭ (M87)। তারই কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই ব্ল্যাক হোলটি। ভর সূর্যের থেকে ৬.৫ বিলিয়ন গুণ বেশি। অন্যান্য দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বরের মতো প্রবল তার খিদে। উচ্চ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য সমস্ত পদার্থকে গ্রাস করে নেয় ব্ল্যাক হোল। ছাড় পায় না আলোকরশ্মিও। ব্ল্যাক হোলের সম্পূর্ণ রহস্য উদঘাটন আজও সম্ভব হয়নি মানুষের পক্ষে। গবেষণার পরিধি যত বেড়েছে, তত বিস্মিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেই তালিকায় নতুন করে সংযোজিত হল এম৮৭-এর ব্ল্যাক হোলটি। ২০১৯-এ ‘ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ’-এর সাহায্যে ছবি তোলা হলেও, তার ঘূর্ণায়মানতা নিয়ে সংশয় ছিল বিজ্ঞানীদের মধ্যে। চিনের একদল বিজ্ঞানী লক্ষ করেন আগের গবেষণায় যেদিকে তার গতি দেখা গেছিল, তা সম্পূর্ণ অন্যদিকে বদলে গেছে। 

তখন তাঁরা দেখতে শুরু করেন ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাওয়া তথ্যভাণ্ডার। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, রাশিয়ার অন্তত চব্বিশটি রেডিও টেলিস্কোপিক যন্ত্র থেকে কুড়ি বছরের গবেষণা মিলিয়ে দেখে তাঁরা নিশ্চিত হন ব্ল্যাক হোলটির ঘূর্ণায়মানতা (Spinning) সম্পর্কে। দেখা গেছে বিগত এগারো বছরে পুনরাবৃত্ত চক্রে ১০ ডিগ্রি কোণে পর্যায়ক্রমিক পথে ঘুরছিল সেটি। বিষয়টি আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য জাপানের ‘ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল অবজারভেটরি’-র সুপার কম্পিউটারের সাহায্য নেন তাঁরা। ব্ল্যাক হোলের প্রকৃত ঘূর্ণন অক্ষটি তার বলয়ের অক্ষয়ের যথাযথভাবে বিন্যস্ত ছিল না। যা স্থানকালের ফ্যাব্রিককে টেনে এনে গতিপথকে বিশৃঙ্খল করে দেয়। এই ঘটনার ভবিষ্যদ্‌বাণী বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বহুদিন আগেই করেছিলেন। 

যদিও ব্ল্যাক হোলটির ঘূর্ণায়মানতার যথার্থ কারণ সম্পর্কে ধোঁয়াশা রয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। এখনও আবিষ্কার করা যায়নি তার গতিবেগ। আরো দীর্ঘ গবেষণা প্রয়োজন এই প্রশ্নগুলির উত্তর পাওয়ার জন্য। তবে তাঁরা অনুমান করছেন, ভবিষ্যতের গবেষণায় খোঁজ মিলবে দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বরের জন্মরহস্যের। যা সম্ভব হলে আক্ষরিক অর্থেই খুলে যাবে নতুন দিগন্ত। এখন শুধু অপেক্ষা তাঁদের গবেষণার সাফল্যের। 

আরও পড়ুন
আর মাত্র ৩ বছর, দুই দৈত্যাকার ব্ল্যাকহোলের সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করবে সভ্যতা

চিত্রঋণ : Britannica

আরও পড়ুন
ল্যাবরেটরিতেই ব্ল্যাক-হোল, গাণিতিক মডেলের নেপথ্যে দুই বাঙালি গবেষক

Powered by Froala Editor