ল্যাবরেটরিতেই ব্ল্যাক-হোল, গাণিতিক মডেলের নেপথ্যে দুই বাঙালি গবেষক

গত বছর মার্চ মাসের কথা। ল্যাবরেটরিতে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোলের অনুরূপ ধর্ম-বিশিষ্ট পদার্থের জন্ম দিয়েছিলেন ইজরায়েলের গবেষকরা। একধাপ এগিয়ে এবার ল্যাবরেটরিতে ব্ল্যাক হোল তৈরির ভিন্ন একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করলেন ভারতের বিজ্ঞানীরা। সংশ্লিষ্ট গবেষণার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন দুই বাঙালি পদার্থবিদও। 

সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি। গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন উত্তর প্রদেশের হরিশচন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পদার্থবিদ তাপস দাস, করণ ফার্নান্ডেজ এবং সুশোভন মাইতি। ইজরায়েলের গবেষকরা লেজার রশ্মির মাধ্যমে পদার্থের পঞ্চম দশা তথা বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট তৈরির মাধ্যমেই ব্ল্যাক হোলের চরিত্র তৈরি করেছিলেন ল্যাবরেটরিতে। তবে ব্ল্যাক হোলের ভারতীয় মডেলটি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে শব্দ-তরঙ্গ এবং ঘূর্ণায়মান প্রবাহী পদার্থ।

উচ্চ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে, সমস্ত পদার্থকেই গ্রাস করতে পারে ব্ল্যাক হোল। এমনকি তার প্রান্তভাগ থেকে নির্গত হতে পারে না আলোও। ব্ল্যাক হোলের এই সীমানা পরিচিত ‘দিগন্ত’ বা ‘হরাইজন’ নামে। ঘূর্ণায়মান সনাতন বা কোয়ান্টাম প্রবাহীর সঙ্গেই এই ঘটনাকে তুলনা করেছেন ভারতীয় গবেষকরা। দেখিয়েছেন, ঘূর্ণায়মান প্রবাহীর মধ্যে শব্দতরঙ্গ পাঠানো হলে প্রবাহীকে দুটি স্বতন্ত্র অঞ্চলে বিভক্ত করে এই তরঙ্গ। ঘূর্ণাবর্তের বাইরের দিকে তৈরি হয় সাবসোনিক অঞ্চল অর্থাৎ যেখানে তরঙ্গের গতিবেগ থাকে তুলনামূলকভাবে কম; এবং ঘূর্ণাবর্তের অভ্যন্তরে তৈরি হয় সুপারসোনিক অঞ্চল। কম্পাঙ্কের এই তারতম্যের কারণেই সোনিক সারফেস বা শব্দতল থেকে কোনো তরঙ্গই বাইরে বেরতে পারে না। উল্লেখ্য, ব্ল্যাক হোলেও এই একই ঘটনা ঘটে আলোক তরঙ্গের ক্ষেত্রে। 

গাণিতিকভাবে এই মডেলের সঙ্গে মহাজাগতিক ব্ল্যাক হোলের চরিত্রের তুলনা করেছেন ভারতীয় গবেষকরা। আগামীদিনে ব্ল্যাক হলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, হকিং বিকিরণ ও ব্ল্যাক হোল থেকে মহাজাগতিক কণার নির্গমনের মতো ঘটনাকে এই মডেলের মাধ্যমে পরীক্ষা ও শনাক্ত করা সম্ভব বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। বলতে গেলে, কৃষ্ণগহ্বর-রহস্যের সমাধানে বিজ্ঞানকে আরও একধাপ এগিয়ে দিল ভারতীয় গবেষকদের তৈরি এই মডেল…

Powered by Froala Editor

More From Author See More