আর মাত্র ৩ বছর, দুই দৈত্যাকার ব্ল্যাকহোলের সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করবে সভ্যতা

এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে পেটুক সে। অনর্গল গিলে চলেছে একের পর এক নক্ষত্র, ধূলিকণা, মেঘপুঞ্জ। আলোকরশ্মিও নিস্তার পায় না তার থেকে। ব্ল্যাকহোল (Black Holes)। কৃষ্ণগহ্বরের সম্পূর্ণ রহস্য উদ্ঘাটন আজও সম্ভব হয়নি মানুষের পক্ষে। আজও হাজার অজানা তথ্য নিয়েই এই ব্রহ্মাণ্ডে ঘুরে চলেছে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত কৃষ্ণগহ্বর। এবার এমনই দুটি দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষ (Collision) প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাবে মানব সভ্যতা।

না, খালি চোখে তা দেখার সুযোগ পাবেন না সাধারণ মানুষ। তবে লেজার ইন্টারফেরোমিটার যন্ত্রের মাধ্যমে গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি থেকে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন গবেষকরা। যা আগামীদিনে বিজ্ঞানকে নতুন দিশা দেখাবে বলেই অভিমত তাঁদের। প্রশ্ন থেকে যায়, কবে কোথায় এই সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করা যাবে? তার কতটা প্রভাবই বা পড়বে পৃথিবীতে?

গবেষকদের অনুমান, আগামী ৩ বছরের মধ্যে এই সংঘর্ষ ধরা পড়বে ইন্টারফেরোমিটার যন্ত্রে। তবে আমরা যে সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করব, তা ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে ব্রহ্মাণ্ডে। আজ থেকে কোটি কোটি বছর আগে। আসলে, দৈত্যাকার ব্ল্যাকহোল দুটি আকাশগঙ্গা নয়, বরং রয়েছে দূরবর্তী এক ছায়াপথে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম ‘এসডিএসএস জে১৪৩২৩০৩’। এই ছায়াপথ থেকে আকাশগঙ্গা বা আমাদের সৌরমণ্ডলের দূরত্ব প্রায় ১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ অর্থাৎ ১০০ কোটি বছর। কাজেই, মূল সংঘর্ষটি ঘটে গেছে ১০০ কোটি বছর আগে। তবে সেই সংঘর্ষে উৎপন্ন আলোক ও অভিকর্ষ তরঙ্গ এতদিন পরে এসে পৌঁছাচ্ছে পৃথিবীতে। 

অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগেও লিগো এবং ভারগো অবজারভেটরিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রে ধরা পড়েছিল ব্ল্যাকহোলের সংঘর্ষ। তবে আগামীদিনে হতে চলা এই সংঘর্ষের বিশেষত্ব কী? কেন-ই বা তা নিয়ে এত উচ্ছ্বসিত গবেষকরা? আসলে কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষ অত্যন্ত বিরল একটি মহাজাগতিক ঘটনা। পাশাপাশি যে দুটি ব্ল্যাকহোলের মধ্যে সংঘর্ষ হতে চলেছে, সেই দুটিই দৈত্যাকার। দুটির ভরই সূর্যের ভরের প্রায় ২০ কোটি গুণ। জ্যোতির্বিজ্ঞানে এইধরনের ব্ল্যাকহোলকে রাখা ‘সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল’-এর বিভাগে। এহেন দুটি ব্ল্যাকহোলের সংঘর্ষ এর আগে প্রত্যক্ষ করেননি গবেষকরা। অবশ্য তাত্ত্বিকভাবে এধরনের সংঘর্ষের একাধিক গাণিতিক মডেল রয়েছে মানুষের হাতে। ১০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে ঘটতে চলা বিরল মহাজাগতিক ঘটনাটিই এবার হাতেনাতে প্রমাণ দেবে, মানুষের তৈরি করা গাণিতিক মডেল আদৌ কতটা সঠিক। ফলে, তা নিয়ে উন্মাদনার শেষ নেই জ্যোতির্বিদদের। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র…

Powered by Froala Editor