ড্রাগের প্রভাবে ‘জম্বি’-তে পরিণত হচ্ছে মানুষ? ভয়াবহ দৃশ্য যুক্তরাষ্ট্রে!

রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে চলেছেন এক ব্যক্তি। হাত, মুখ, ঘাড়— সারা শরীরজুড়ে গভীর ক্ষত। ক্ষত বলতে শুকিয়ে যাওয়া দগ দগে ঘা। অথচ, সেই যন্ত্রণার কোনোরকম প্রতিক্রিয়াই নেই তাঁর চোখে-মুখে। নিয়ন্ত্রণও নেই নিজের গতিবিধির ওপর। এমন দৃশ্যের সাক্ষী হলে, আপনা থেকেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে ‘জম্বি’ শব্দবন্ধটি। তবে যে-দৃশ্যের কথা হচ্ছে, তা কোনো সাইফাই হরর সিনেমা কিংবা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসের পাতা থেকে তুলে আনা নয়। সম্প্রতি এমন আশ্চর্য ঘটনা লক্ষ করা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (US) একাধিক অঞ্চলে। 

গল্প-উপন্যাস কিংবা সিনেমার দৌলতে যাঁরা ‘জম্বি’-র সঙ্গে পরিচিত, তাঁদের কম-বেশি সকলেই জানেন, এই আশ্চর্য ভয়ঙ্কর সংকটের মূলে রয়েছে এক ভয়ঙ্কর ভাইরাস। যা রক্তে মিশলেই নাকি সুস্থ মানুষ কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পরিণত হয় ‘জম্বি’-তে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। কোনো ভাইরাস নয়, বরং এই সমস্যার নেপথ্যে লুকিয়ে রয়েছে একটি বিশেষ ড্রাগ (Zombie Drugs)। 

জাইলাজাইন। স্থানীয় ভাষায় যা পরিচিত ‘ট্রানক’ নামে। মূলত পশুচিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যথানাশক, প্রশমক এবং পেশি শিথিল করার কাজে ব্যবহৃত হয় এই বিশেষ ওষুধ। তাছাড়া পরবর্তীতে হেরোইনের মতো অন্যান্য মাদকের ব্যবহার কমাতে এই বিশেষ ড্রাগের ব্যবহার শুরু হয় ন্নান ক্ষেত্রে। তবে পরবর্তীতে হাত ঘুরে এখন এই ওষুধ পৌঁছায় যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ ব্যবসায়ীদের কাছে। হয়ে ওঠে নতুন ‘বাণিজ্যিক পণ্য’। ফেন্টানাইল ও অন্যান্য অবৈধ ওষুধের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ‘ট্রানক’। দেদার বিকোচ্ছে কালোবাজারে।

হ্যাঁ, বাণিজ্যিক পণ্যই বটে। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব-প্রান্তের প্রদেশ ফিলাডেলফিয়ায় এই ড্রাগের ব্যবহার শুরু হলেও, বর্তমানে সান ফ্রান্সিসকো কিংবা লস অ্যাঞ্জেলিসের মতো পশ্চিমের শহরেও রীতিমতো প্রভাব বিস্তার করেছে এই বিশেষ ড্রাগ। যা ইতিমধ্যেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কিন প্রশাসনের কাছে। 

কিন্তু মানবদেহে কী প্রভাব পড়ে এই ড্রাগের? কেন-ই বা তাকে ক্ষতিকর ড্রাগের তালিকায় অন্তর্ভুক করছেন চিকিৎসকরা? আসলে স্বল্প মাত্রায় এই ড্রাগ কাজ করে অনেকটা মরফিনের মতো। দীর্ঘক্ষণ ঘুম, শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে এক্ষেত্রে। সঙ্গে ঝিমুনি ভাব। বেশি পরিমাণে এই ড্রাগ গ্রহণে সাময়িকভাবে কর্মক্ষমতা হারায় মস্তিষ্কের সেরিবেলাম। উল্লেখ্য, এই অংশটিই দেহের গতিবিধির নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে, ড্রাগ নেওয়ার দীর্ঘক্ষণ পর ঘুম ভাঙলেও, শরীরের নিয়ন্ত্রণ থাকে না মানুষের হাতে। অনেকটা জম্বির মতোই হয়ে ওঠে তাদের চলাচল। 

পাশাপাশি ক্রমাগত এই ড্রাগ গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে উঠলে, শরীর জুড়ে দেখা দেয় গভীর ক্ষত। দগদগে ঘা ছড়িয়ে পড়ে গোটা শরীরে। কখনও আবার শুকিয়ে যায় ত্বক। দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সেক্ষেত্রে অঙ্গ ব্যবচ্ছেদের প্রয়োজন পড়ে অনেকক্ষেত্রে। এমনকি যেতে পারে ড্রাগ গ্রহণকারীর প্রাণও। ফলে, সবমিলিয়ে এই নতুন ‘জম্বি ড্রাগ’-এর মারণক্ষমতা রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে চিকিৎসকদের। 

উল্লেখ্য, এই প্রথম নয়। ২০১৪ সালেই প্রথমবার এহেন জম্বি ড্রাগ চিহ্নিত করেছিলেন গবেষকরা। সেবারেও ‘ফাক্কা’ নামের এই মারণ ড্রাগটি পাওয়া গিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই। কয়েক বছরের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় বর্তমানে খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে এই বিপজ্জনক ড্রাগের ব্যবহার। তবে সমস্যা মিটতে না মিটতেই ফের নতুন চ্যালেঞ্জ এসে হাজির হল মার্কিন প্রশাসনের সামনে…

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More