৮০ বছর পর উদ্ধার চেক যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ, সামনে এল বিশ্বযুদ্ধের অজানা গল্পও

তখন বিশ্বযুদ্ধে চালকের আসনে হিটলার। এক কথায় তাঁর সেনাবাহিনী অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু  ১৯৪১ সালে সেই শক্তিশালী নাৎসি ঘাঁটিতেই সফল আঘাত হানে একটি চেক যুদ্ধবিমান। বিধ্বস্ত হয়ে যায় জার্মানির ব্রেমেন বন্দর। কিন্তু হিটলারের রাজত্বে প্রবেশ করার থেকেও বেশি কঠিন ছিল সেখান থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে আসা। আর তা পারেওনি ব্রিটেনের যুদ্ধবিমানটি। শত্রুপক্ষের শিবির থেকে ফিরে আসার সময়ই তার পিছু নেয় দুটি জার্মান ফাইটার জেট। নজর এড়িয়ে খানিকটা পথ পালিয়ে এলেও, আর শেষরক্ষা হয়নি। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরের কাছেই ধরাশায়ী হয় বিমানটি।

তারপর পেরিয়ে গেছে ৮০ বছর। এতদিন পর এবার ডাচ উদ্ধারকর্মীরা খুঁজে পেলেন ব্রিটেনের সেই ‘ওয়েলিংটন’ বোমারু বিমানের ধ্বংসাবশেষ এবং বিমানকর্মীদের পোশাক ও হাড়ের টুকরো। নেদারল্যান্ডসে ছড়িয়ে থাকা বিশ্বযুদ্ধের নিদর্শনগুলিকে নতুন করে পুনরুদ্ধার এবং তা সংরক্ষণের এক অভিনব প্রকল্প নিয়েছে ডাচ সরকার। বিগত ২৫ মে থেকেই শুরু হয়েছে এই পুনরুদ্ধার কার্য। সেই প্রকল্পের অধীনেই সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া গেল এই যুদ্ধবিমানটির ধ্বংসাবশেষ।

সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা বিমানের কিছু ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার পরেই খবর দেন ডাচ প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন চেক রাষ্ট্রদূত কাতেরিনা সেকেনসোভা। সামরিক ফরেনসিক দপ্তরের আধিকারিক ও বিশ্বযুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা পরে সনাক্ত করেন বিমানটিকে। তারপর বিশ্বযুদ্ধের নথি থেকে খুঁজে বার করা হয় সমস্ত তথ্য। 

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বোমারু বিমানটিতে মূলত ৬ জন সামরিক আধিকারিক ছিলেন। তাঁরা সকলেই আরএএফ ৩১১ চেকোস্লোভাক স্কোয়াড্রনের সেনানী। তবে তাঁরা নাৎসি অধিকৃত চেকোস্লোভাকিয়া ছেড়ে প্রথম পোল্যান্ড পরে ফ্রান্সে আশ্রয় নেন। সেদিন জার্মান হামলার পর মারা গিয়েছিলেন বিমানের ৫ জন সেনানী। তবে বিমানচালক সার্জেন্ট ভিলেম বুফকা একমাত্র প্রাণে বেঁচে যান। অগ্নিদগ্ধ বিমানটি থেকে প্যারাসুট খুলে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। তবে স্বল্প উচ্চতা থেকে লাফ দেওয়ায় ভেঙে যায় পা। তারপর নাৎসি সেনাদের হাতে বন্দি হন ভিলেম। প্রায় চার বছর কোল্ডিৎজ দুর্গে বন্দি থাকার পর বিশ্বযুদ্ধের শেষে ১৯৪৫ সালে আগস্ট মাসে মুক্তি পান তিনি। 

আরও পড়ুন
সিন্থেটিক ড্রাগে অভ্যস্ত ছিল নাৎসি সেনারা, ‘নেশা’র অভাবেই আত্মহত্যা হিটলারের?

আরএএফ মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৩১১ স্কোয়াড্রনের মূল লক্ষ্য ছিল জার্মানির ব্রেমেন এবং কলোন শহর। গোটা বিশ্বযুদ্ধেই বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্যের নজির রেখেছিল এই চেক স্কোয়াড্রন। ১৯৪৩ সালে টাংস্টেন বোঝাই একটি জার্মান রণতরীকে ফ্রান্সের আটলান্টিক সমুদ্রতটে বোমাবর্ষণে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন এই স্কোয়াড্রনের বিমানসেনানীরা। যা বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয় বলেই দাবি গবেষকদের। 

আরও পড়ুন
তৃষ্ণার্ত সেনানীরা, বিশ্বযুদ্ধে বিয়ার ফেরির দায়িত্বে ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান!

বিশ্বযুদ্ধের সময় মাত্র ৫ বছরের মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল নেদারল্যান্ডসে। তার মধ্যে সব মিলিয়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন মাত্র ৫০ জন বিমানচালক। ডাচ সরকারের এই প্রকল্প চলতে থাকলে, একে একে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে বিধ্বস্ত সেই বিমানগুলির অংশও। সামনে আসবে বিশ্বযুদ্ধের আরও অজানা নতুন তথ্য। সেই আশাতেই উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন ঐতিহাসিকরা…

আরও পড়ুন
বিশ্বযুদ্ধের ৭৬ বছর পরেও নাৎসি শাসন! জার্মানিতে আজও রয়েছে এই গ্রাম

Powered by Froala Editor