পরিচর্যাহীন বট-অশ্বত্থ চারার পুনর্বাসন, ভূমিক্ষয় রুখতে উদ্যোগ হাওড়ায়

আমফানের মতো বিধ্বংসী রূপ নেয়নি ইয়াসের গতিবেগ। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে তাকেও যেন ছাপিয়ে গেছে এই ঘূর্ণিঝড়। বাঁধ টপকে যেমন জল ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বহু অঞ্চল, তেমনই প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সামনে কোথাও কোথাও ভেঙে পড়েছে নদীর বাঁধ। উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছ। এবার সেই ক্ষত সারিয়ে তুলতেই উদ্যোগী হল হাওড়ায় মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি।

“আমরা মূলত গ্রামীণ হাওড়াতেই এই বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি নিয়েছি। দামোদর, রূপনারায়ণ, ভাগীরথী— এই নদীগুলির ধারে ধারেই আমরা সার দিয়ে গাছ লাগাব। বট, অশ্বত্থ, পাকুড় এই ধরনের গাছগুলো মাটিকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে। তাই এগুলোকেই আমরা রোপণের জন্য বেছে নিয়েছি প্রাথমিকভাবে।”

বলছিলেন মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতির সম্পাদিকে জয়িতা কুণ্ডু। ভূমিক্ষয় কিংবা বাঁধের ভাঙন আটকাতে এর থেকে আর ভালো উপায় কী-ই বা আছে। তবে এই কর্মসূচির অভিনবত্ব লুকিয়ে রয়েছে অন্য জায়গায়। জয়িতা জানালেন, “রাস্তার ধারে, বাড়ির দেওয়ালে কিংবা কংক্রিটের পাঁচিলের ওপর দানা পড়ে অনেক গাছের চারা জন্মায়। বিনা পরিচর্যাতেই। কিন্তু সেগুলো আর পরবর্তীতে মহীরুহ হয়ে উঠতে পারে না। আমরা সেই চারাগুলি সংগ্রহ করেই নদী তীরবর্তী অঞ্চলে রোপণ করব।” সত্যিই এ এক অভিনব উদ্যোগ। সেদিক থেকে দেখতে গেলে বৃক্ষরোপণ বলার থেকে বৃক্ষ পুনর্বাসন বলাই চলে এই প্রয়াসকে। 

ইয়াসের পর পরই এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতির সদস্যরা। বিগত দু’সপ্তাহ গোটা অঞ্চল জলমগ্ন থাকার কারণে বৃক্ষরোপণ সম্ভব হয়নি ঠিকই, তবে চারা সংগ্রহের প্রক্রিয়া নিরলসভাবেই চালিয়ে গেছেন তাঁরা। আজ পরিবেশ দিবস। সেই কথা মাথায় রেখে, আজ থেকেই শুরু হচ্ছে গাছেদের এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। চলবে গোটা বর্ষাকাল জুড়েই। 

আরও পড়ুন
পরিকল্পনাহীন বৃক্ষরোপণে প্রকৃতিরই ক্ষতি, সতর্কতা গবেষকদের

এই বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম ‘বাস্তুতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা’। সেই কথাই মনে করিয়ে দিলেন জয়িতা, “একটা বড়ো গাছ তো আসলে বাস্তুতন্ত্রের ধারক। সেটাকে কেন্দ্র করেই কীট-পতঙ্গ, বহু প্রজাতির পাখি ও প্রাণীর জীবন নির্ভর করে থাকে। বট বা অশ্বত্থ গাছকে বেছে নেওয়ার আরও একটা কারণ সেটাও।”

আরও পড়ুন
দুই সহস্রাধিক গাছের অভিভাবক তিনি, বার্ধক্যও দমাতে পারেনি পুরুলিয়ার দুখু মাঝি-কে

তবে বৃক্ষরোপণেই সীমাবদ্ধ নেই মাধবপুরের পরিবেশকর্মীদের এই উদ্যোগ। বৃক্ষগুলি যাতে পরিণত হয়ে উঠতে পারে, সেদিকেও নিয়মিত নজদারি চলবে বলেই জানালেন জয়িতা। সেই সঙ্গে পরিচর্যা ও দেখাশোনার জন্য স্থানীয় ক্লাবগুলির সঙ্গেও ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছেন তাঁরা। সবমিলিয়ে ইয়াস পরবর্তী সময়ে পরিবেশের চেহারা ফেরাতে মরিয়া লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মাধবপুরের পরিবেশকর্মীরা…

আরও পড়ুন
১৫৫টি গাছের ঔষধি গুণ নখদর্পণে, বিনামূল্যেই চিকিৎসা করেন অশীতিপর ভাষাসৈনিক

Powered by Froala Editor