নিধন রুখতে বৃক্ষ-আলিঙ্গন মহিলাদের, উত্তরাখণ্ডে ‘চিপকো আন্দোলনে’র ছায়া

১৯৭৩ সাল। পরিবেশ নিধনের বিরুদ্ধে উত্তরাখণ্ড দেখেছিল এক অভিনব প্রতিবাদ। গাছের প্রাণ বাঁচাতে সেদিন সন্তানস্নেহে তাদের জড়িয়ে ধরেছিলেন বাসিন্দারা। জন্ম নিয়েছিল ‘চিপকো আন্দোলন’। প্রায় পাঁচ দশক পর আবার ফিরে এল সেই আন্দোলনের পটভূমি। গত মাসের ১৬ তারিখ উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর জেলার জাখানি গ্রামের মহিলারা অংশ নিলেন প্রতীকী চিপকো আন্দোলনে। কামেদী দেবী থেকে মাজগাঁও-চৌতলা সড়ক নির্মাণের জন্য বৃক্ষচ্ছেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন তাঁরা।

‘ওয়ান ওম্যান-ওয়ান ট্রি’। এই ছিল গত মাসের চিপকো আন্দোলনের মূলমন্ত্র। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, সড়কপথ নির্মাণের জন্য যে জঙ্গল কাটা হবে তা তাঁদের কাছে একটি পবিত্র অরণ্য। আরাধ্য দেবীকে উৎসর্গীকৃত। তাই কোনোভাবেই এই অরণ্যের ধ্বংসসাধন করতে দেবেন না তাঁরা। 

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তাটি করার অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। তবে সেবারেও প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন সেরি এবং জাখানি গ্রামের গ্রামবাসীরা। প্রতিবাদে শেষ পর্যন্ত নতজানু হতে বাধ্য হয়েছিল সরকার। বন্ধ হয়েছিল নির্মাণ। তবে সম্প্রতি জাখানির পাশের গ্রাম মাজগাঁওয়ের গ্রামবাসীরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাস্তা তৈরির পক্ষে সওয়াল হয়ে। তাতে তাঁদের আবেদন মেনেই রায় দেয় আদালত। 

জাখানি ছাড়াও বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদে নেমেছিলেন সেরি গ্রামের গ্রামবাসীরাও। প্রাথমিকভাবে তাঁদের অবস্থানের জন্য রাস্তা নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকে। শেষে পুলিশ এসে ছত্রভঙ্গ করে দেয় আন্দোলনকারীদের। পুনরায় শুরু হয় রাস্তা তৈরির কাজ। সেরি গ্রামের বাসিন্দাদের বক্তব্য, শুধু পরিবেশ দূষণই নয়, গাছ কাটার ফলে শুষ্ক অঞ্চলে আরও রুক্ষ হয়ে উঠবে মাটি। ফলে পরিবেশগত সমস্যার পাশাপাশি বাড়বে জলের অভাবও।

আরও পড়ুন
পেরেকের যন্ত্রণা থেকে গাছেদের মুক্তি দিতে, ৭ জেলা ঘুরে ঢাকায় ওয়াহিদ সরদার

এখানেই শেষ নয়। জঙ্গল নিধনের ফলে বাসস্থান হারাবে বন্যপ্রাণীরাও। বাড়বে মানুষের সঙ্গে তাদের সংঘাত। গ্রামবাসীদের মতে, আগে সেরি ও জাখানি মিলিয়ে মোট ৮ বর্গ কিলোমিটার প্রশস্ত বনভূমি ছিল। বর্তমানে তা কমতে কমতে এসে ঠেকেছে মাত্র দেড় বর্গ কিলোমিটারে। তবে প্রতিশ্রুতি দিয়েও বৃক্ষচ্ছেদনের প্রেক্ষিতে নতুন করে রোপণ করা হয়নি কোনোবারই। চলতি নির্মাণের জন্য শুধু জাখানিতেই কাটা পড়তে পারে আরও ৫০০ গাছ। যা ডেকে আনতে চলেছে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়।

অন্যদিকে জেলাশাসকের দাবি, বিষয়টি উর্ধ্বতন পদাধিকারীদের জানানো হয়েছে। তাঁরা খতিয়ে দেখছেন  গোটা ব্যাপারটি। প্রয়োজনে গ্রামবাসীদের সঙ্গে বৈঠকে বসা হবে বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা। তবে অরণ্য রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জাখানির মহিলারা। পরিবেশগত ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে চিপকো আন্দোলনকে হাতিয়ার করেই লড়াই করে যাচ্ছেন তাঁরা…

আরও পড়ুন
উত্তরপ্রদেশে রাস্তা নির্মাণের জন্য কাটা পড়বে ১ লক্ষ ৮৯ হাজার গাছ, জানাচ্ছে আরটিআই

Powered by Froala Editor

More From Author See More