কন্যাজন্মের আনন্দে ১১১টি বৃক্ষ রোপণ, এমনই রীতি রাজস্থানের গ্রামে

ধরুন, কোনো এক রাখী পূর্ণিমায় গিয়েছেন রাজস্থানের অরণ্যে ঢাকা কোনো গ্রামে। রাজস্থানে অরণ্য! এটুকু শুনেই অবাক লাগছে নিশ্চই? আরও অবাক করা ঘটনার সাক্ষী হতে হবে আপনাকে। দেখবেন গ্রামের কিশোরীরা সবাই রাখী বেঁধে দিচ্ছেন বন্ধু গাছেদের হাতে, থুরি, শাখায়। এই গাছেরাই তাদের কাছে ভাইয়ের মতো। জন্মও যে হয়েছে প্রায় একই সময়ে। হ্যাঁ, পাশাপাশি প্রায় ৫টি গ্রামে পালন করা হয় এই রীতি। যে কোনো কন্যাসন্তানের জন্মের পরেই ১১১টি গাছ লাগান তাঁর অভিভাবকরা। ভারতের বুকে এখনও মেয়েদের সংসারের বোঝা হিসাবে দেখেন অনেকেই। সেখানে রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামবাসীরাই লিঙ্গসাম্যের নতুন উদাহরণ তৈরি করছেন।

শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে ১৪ বছর আগে। তখন ২০০৭ সাল। রাজস্থানের শুষ্ক আবহাওয়া পর্যটকদের কাছে মনোরম হলেও, স্থানীয় বাসিন্দাদের সত্যিই অসহ্য লাগত। আর তার মধ্যেই পিপলন্ত্রী গ্রামের কাছে তৈরি হল মার্বেল পাথরের খাদান। গুঁড়ো গুঁড়ো পাথর পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলল। আদৌ কি বদলে ফেলা সম্ভব এই পরিবেশ? গ্রামবাসীরা যখন সে-কথা ভাবছেন, তখনই পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামসুন্দর পালিওয়ালের ছোট্ট মেয়ে ডিহাইড্রেশনে ভুগে প্রাণ ত্যাগ করল। পরিবেশ যে ক্রমশ বেঁচে থাকার পক্ষে কতটা অসহ্য হয়ে উঠছে, সেটা বুঝতে পারলেন সবাই। আর শ্যামসুন্দর তখন মেয়ের স্মৃতিতে লাগালেন ১১১টি গাছ। ১১১ সংখ্যাটি শুভ সংখ্যা হিসাবেই বিশ্বাস করেন গ্রামবাসীরা।

দেখতে দেখতে শ্যামসুন্দরের এই কাজের কথা ছড়িয়ে পড়ল আশেপাশের গ্রামেও। পরিবেশের প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত হল লিঙ্গের প্রশ্নও। মেয়েদের আর খাটো চোখে দেখা উচিৎ নয়, এই কথা বুঝতে পারলেন সবাই। আর সেখান থেকেই শুরু এই প্রথার। না, প্রকৃতি-পরমাবাদের উত্তরাধুনিক ধারণার সঙ্গে পরিচিত নন কেউই। তাঁরা এই প্রথার জন্ম দিয়েছেন নিজেদের বাস্তব উপলব্ধি থেকে।

প্রত্যেক কন্যাসন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যেমন গাছ লাগানো হয়, তেমনই প্রতি বছর বর্ষার মুখে নতুন চারাগাছ রোপণ করেন কন্যাসন্তানের অভিভাবকরা। তার মধ্যে আম, জামের মতো ফলের গাছ যেমন থাকে, তেমনই থাকে নিম, পিপুলের মতো গাছও। এক একটি গ্রামে এখন ৫০০-র বেশি গাছ চোখে পড়বে। আর রাজস্থানের শুষ্ক আবহাওয়ায় একেই অরণ্য বলে মনে করেন অনেকে। গ্রামবাসীদের মতে, এই ১৪ বছরে আবহাওয়া অনেক কোমল হয়ে এসেছে। বেড়েছে ভূগর্ভস্থ জলস্তর। এখন আর ডিহাইড্রেশনে প্রাণ হারাতে হবে না কাউকেই। আর তার সঙ্গেই মেয়েদের শিক্ষা, স্বাধীনতা বিষয়েও সচেতনতা বেড়েছে। প্রত্যেকেই প্রতিজ্ঞা করেছেন, পড়াশোনা শেষ না হলে মেয়েদের বিয়ে দেবেন না। এতদিন প্রত্যেকেই পুত্রসন্তান চাইতেন। এখন যেন কন্যাসন্তানের জন্যই উন্মুখ হয়ে থাকেন প্রত্যেক দম্পতি।

আরও পড়ুন
অন্ধত্বের শিকার সন্তান, ৩৫ বছর ধরে দৃষ্টিহীনদের জন্য ব্রেইল ছাপাচ্ছেন মার্কিন মহিলা

Powered by Froala Editor