ব্লেড দিয়ে গাল কেটে ‘শাস্তি’, নিস্তার নেই চোখে চোখ পড়লেও

রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি। দুমাস ধরে তিনি রয়েছেন এমন এক জায়গায়, যেখানে নিয়ম মেনে প্রতিদিন দাড়ি কামাতে হয়। না, যতটা সহজ ভাবছেন ততটা আদৌ নয়। দাড়ি কামানোর জন্য তাঁকে দেওয়া হয় না কোনো রেজর। তাহলে? আইন ভাঙার শাস্তি হিসাবে আইনের রক্ষকরা ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়ে যান গাল। আর নাভালনিকে মাথা নিচু করে সহ্য করতে হয় সবকিছু। আক্ষরিক অর্থেই মাথা নিচু করে। কারণ কোনোভাবে আইনের রক্ষকদের চোখে চোখ পড়ে গেলে তারও শাস্তির ব্যবস্থা আছে। দুহাত পিছনে বাঁধা অবস্থায় বসে থাকতে হবে সারাদিন। জেলের মধ্যে এভাবেই অত্যাচারে দিন গুনছেন অ্যালেক্সি নাভালনি।

রাশিয়ার মানবাধিকার কর্মী ও বিরোধী নেতা নাভালনির উপর আইনি নিপীড়নের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও। এই প্রথম সেখানে তৈরি হয়েছে নতুন আইন। আর সেই আইন অনুযায়ী নাভালনির উপর নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মচারীদের বয়কট করার ডাকও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোকিছুতেই দমে যেতে রাজি নয় রুশ সরকার। বরং হাসতে হাসতে তাঁরা বলেন, মানবিক কারণেই সাইবেরিয়ার সবচেয়ে কষ্টকর জেলখানায় রাখা হয়নি নাভালনিকে। তাঁকে রাখা হয়েছে ২ নং পেনাল কলোনিতে। তবে তাঁর আত্মীয় এবং দলীয় অনুগামীরা দাবি করেছেন, এই ২ নং পেনাল কলোনিই রাশিয়ার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জেলখানা। আইনের নামে সেখানে রীতিমতো মধ্যযুগীয় কায়দায় অত্যাচার করা হয় আসামীদের উপর। এমনকি কোনোভাবেই কোনো উকিল বা আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতেও দেওয়া হয় না। পৃথিবীর আর কোনো দেশেই সম্ভবত এরকম আইন নেই।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অবশ্য আগেই দেওয়া হয়েছিল। নাভালনি তখন বার্লিনের হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর খাবারে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আর তাই চিকিৎসার জন্য যেতে হয়েছিল বার্লিনে। এদিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় তিনি তখন প্যারোলে মুক্ত। তাই বার্লিন যাওয়ার বিষয়টি বে-আইনি। অন্তত তেমনটাই দাবি রাশিয়ার আমলাদের। অনেকেই নাভালনিকে আর রাশিয়া ফিরে না যেতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু দেশের মাটির টান অস্বীকার করা কি সহজ? জানুয়ারি মাসে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই তিনি ফিরলেন স্বদেশে। আর এরপরেই লোক দেখানো বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে দুবছরের কারাদণ্ড দেওয়া হল। তারপর ঠিকানা ২ নং পেনাল কলোনি।

রাশিয়ায় মানবাধিকার কর্মীদের উপর অত্যাচারের ঘটনা মাঝেমাঝেই শিরোনামে উঠে আসে। অ্যালেক্সি নাভালনির ঘটনা সেই সমস্ত খবরকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তাঁর কাজ আন্তর্জাতিক স্তরেও স্বীকৃত। এমন একজন নেতার সঙ্গেও অমানবিক আচরণ করতে দুবার বিবেচনা করছেন না রুশ সরকার? অবাক সকলেই। আর তাঁর দলীয় অনুগামীদের বক্তব্য, সরকার খুব ভালো করেই জানে, কোনো অত্যাচারেই তাঁর মানসিকতার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে ২ নং পেনাল কলোনির অত্যাচার তাঁর ব্যক্তিত্বকে হয়তো ভেঙে দিতে পারবে। তখন হয়তো চোখের সামনে অন্যায় দেখেও প্রতিবাদ করতে ভয় পাবেন নাভালনি। আসলে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যকেই ভেঙে দিতে চাইছে রুশ সরকার।

আরও পড়ুন
নাটকের নামেই ‘ধর্মীয় ভাবাবেগে’ আঘাত! মধ্যপ্রদেশে বন্ধ হল নাট্যোৎসব

Powered by Froala Editor

More From Author See More