অচল শরীর নিয়েই রেসিং ট্র্যাকে, ইতিহাস গড়ার পথে স্যাম স্মিড

ছোটো থেকেই রেসের মাঠে দুরন্ত গতিতে ছুটে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন স্যাম স্মিড। গতিই ছিল তাঁর জীবন। শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন সার্থক করার সিঁড়িতেও পা দিয়েছিলেন। আমেরিকার ঐতিহ্যশালী ইন্ডিয়ানাপোলিস রেসে অংশ নিয়েছিলেন ১৯৯৯ সালে। কিন্তু তারপরেই নেমে এসেছিল দুর্ঘটনার করাল ছায়া। সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত রেসের মাঠকে বিদায় জানাতে বাধ্য হন তিনি। ২১ বছর পর আবারও রেসের মাঠে ফিরতে চলেছেন স্মিড। অবশ্য শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে নয়। বরং তাঁর এই প্রত্যাবর্তন ঘটাতে চলেছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।

জীবনের প্রথম বড়ো রেসের পর যখন একটু একটু করে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছিলেন স্মিড, ঠিক সেই সময়েই ঘটে গেল দুর্ঘটনা। আঘাত লাগল সরাসরি সুষুম্নাকাণ্ডে। ২০০০ সাল থেকে হুইলচেয়ারই তাঁর সঙ্গী। কাঁধের নিচ থেকে আর কোনো অঙ্গেরই ব্যবহার করতে পারেন না তিনি। কিন্তু এই আকস্মিক আঘাতেও ভেঙে পড়েননি স্মিড। তিনি নিজে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরতে না পারলেও রেসের মাঠ থেকে সম্পূর্ণ বিদায় নেননি। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গড়ে তুললেন রেসিং ক্লাব ‘অ্যারো ম্যাকলার্ন এসপি’। এখনও অবধি ১২টি প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছে এই ক্লাব। কিন্তু স্মিড চাইতেন, তিনি নিজেও আর একবার ছুটে যাবেন ওই পিচঢালা রাস্তার উপর দিয়ে। আদৌ কি তা সম্ভব?

বাছাই করা প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে স্মিড গড়ে তুললেন অ্যারো ইলেকট্রনিক্স। উদ্দেশ্য একটাই। তাঁর মতো যে অসংখ্য মানুষ প্রতিবন্ধকতার জন্য রেসে অংশ নিতে পারেন না, তাঁদের জন্য বিশেষ ধরনের গাড়ি তৈরি করা। ২০১৩ সাল থেকে শুরু হয় গবেষণা। অবশেষে দীর্ঘ ৮ বছরের চেষ্টায় এসেছে সাফল্য। প্রযুক্তিবিদ গ্রেস ডোপকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী তৈরি হয়ে গিয়েছে ‘নাম্বার ৫ অ্যারো ইলেকট্রনিক কর্ভেট সি-৮’। আপাতত এটি পরীক্ষামূলক একটি মডেল হিসাবেই তৈরি করা হয়েছে। তবে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফর্মুলা-১ গাড়ি চালানোও সম্ভব বলে মনে করছেন গ্রেস।

ইতিমধ্যে ১ ঘণ্টায় ২০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়েছেন স্মিড। এভাবে কোনোদিন আবার গাড়ি নিয়ে ছুটতে পারবেন, সেটা যেন এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁর। যদিও স্টিয়ারং-এর উপরে হাত নেই। তার বদলে গাড়ির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে মাথার সাহায্যেই। ক্যামেরা সেন্সর দিয়ে মাথার অভিমুখ দেখে গাড়ি তার অভিমুখ বদল করতে পারবে। আর গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে মুখের মধ্যে লাগানো নলের সাহায্যে। এই প্রযুক্তিকে সঙ্গী করেই আগামী গুডউড উৎসবের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চলেছেন স্মিড। স্বপ্ন বাস্তব হতে চলেছে অবশেষে। আগামীদিনে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে যে মানুষের জীবন আমূল বদলে ফেলা সম্ভব, সেই কথাই আরও একবার প্রমাণ করলেন অ্যারো ইলেকট্রনিক্সের ইঞ্জিনিয়াররা।

আরও পড়ুন
বিশ্ব সেইলিং চ্যাম্পিয়নশিপে তাক লাগালেন ভারতীয় কিশোর

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
স্বপ্ন থামতে দেননি শ্রমিক দিদা, দারিদ্রকে হারিয়ে অলিম্পিকে নাতনি রেবতী