বস্তির শিশুদের আঁকা শেখাতে অভিনব কর্মশালা ‘ছবিওয়ালা’-র

“পিকাসো তো বলতেন সব শিশুই আসলে একজন শিল্পী। শুধু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কারোর সেই শিল্পী সত্তাটা মরে যায়, কারোর কারোর ক্ষেত্রে বেঁচে থাকে। আমরা চেয়েছি ওদের সেই শিল্পী সত্তাটা যেন বেঁচে থাকে। ওরা, মানে গ্যালারির ধারণা থেকে যারা বহু দূরে। যাদের কাছে, যাদের পরিবারের কাছে এখনও ছবি আঁকা মানে শুধুই একটা আঁকার খাতা আর একটা রং-পেন্সিলের বাক্স। ছবিকে যে পেশা হিসাবেও বেছে নেওয়া যায়, সেটা ওরা জানেই না।” বলছিলেন বাংলার স্বশিক্ষিত শিল্পীদের সংগঠন ‘ছবিওয়ালা’-র অন্যতম কর্ণধার সৌরভ মিত্র।

গত রবিবার ‘ছবিওয়ালা’-র সদস্যরা পৌঁছে গিয়েছিলেন কল্যানী সীমান্ত রেলওয়ে স্টেশনের ধারের বস্তিতে। সকাল থেকে সেখানেই বসেছিল এক পাঠশালা। রঙিন পাঠশালা। সৌরভ এবং তাঁর সহশিল্পীদের হাত ধরে এক অন্য জগতের সঙ্গে পরিচয় হল শিশুদের। যে জগৎ শুধু কতগুলো রেখায় আটকে থাকে না, বরং নিজের মনের ভাবকে ফুটিয়ে তুলতে পারে। “ওদের মনের রংকে পাতায় ফুটিয়ে তোলাটুকুই যা আমরা শেখাতে পারি। সারাদিন ধরে সেই চেষ্টাটুকুই চলেছে।” বলছিলেন সৌরভ।

২০১৯ সালে কলকাতার কিছু তরুণ শিল্পীর জেদ থেকে তৈরি হয়েছিল ‘ছবিওয়ালা’। সদস্যদের কারোরই প্রথাগত কোনো শিক্ষা নেই। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে বেরিয়েও যে শিল্পের স্বাদ পুরোপুরি গ্রহণ করা যায়, সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। ক্রমশ গ্যালারির সীমানা অতিক্রম করে তাঁরা পৌঁছে গিয়েছেন ফুটপাতে দর্শকদের মাঝখানে। শহর কলকাতা ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছেন গ্রামে-মফস্বলে। কিন্তু শুধু দর্শকের কাছে নিজেদের ছবি নিয়ে যাওয়াতেই তো শিল্পীর দায়বদ্ধতা শেষ হয়ে যায় না। আগামী প্রজন্মকেও তৈরি করে যেতে হবে। আর সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এই অভিনব ওয়ার্কশপের আয়োজন। যদিও রেল চলাচল বন্ধ থাকা সহ অন্যান্য কারণে দলের সমস্ত সদস্যরা উপস্থিত থাকতে পারেননি। মাত্র ৩ জনের তত্ত্বাবধানে চলেছে এই কর্মশালা। দলের প্রতিষ্ঠাতা সৌরভ মিত্র এবং বিপ্লব ধরের  সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পারিজাত ব্যানার্জি। আর তাতে উপস্থিত ছিল প্রায় ৪০ জন কচিকাঁচা।

ছবিওয়ালার পক্ষ থেকে প্রত্যেকের জন্য ছিল কিছু উপহার। উপহার বলতে আঁকার খাতা আর রং-পেন্সিল। আর ছিল তাঁদের আন্তরিকতা। যে আন্তরিকতার জোরেই ‘ছবিওয়ালা’-রা স্বপ্ন দেখেন, একদিন সমস্ত শিশুই তার শিল্পী সত্তাকে বাঁচিয়ে রেখে বড়ো হয়ে উঠবে। তবে সৌরভ বলছিলেন, “আমাদের আর কতটুকুই বা সামর্থ্য? মানুষের জীবন তো সীমিত। একে একে প্রত্যেকে এগিয়ে এলে আমরা এই পৃথিবীটাকে রঙিন করে তুলতে পারব নিশ্চই।” এই স্বপ্নটুকুই বেঁচে থাকুক।

আরও পড়ুন
কাফকার একগুচ্ছ অপ্রকাশিত চিঠি ও ছবি এবার অনলাইনেই

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
২৮ ঘণ্টায় ২১৬টি ছবি, ১৭ ঘণ্টায় ২৯টি মূর্তি; একের পর এক বিশ্বরেকর্ড বঙ্গতনয়ার