প্রথম ভারতীয় হিসাবে কমিক জগতের ‘অস্কার’জয়ী আনন্দ

শুধু করোনা অতিমারীর কারণেই নয়, তাঁর জীবনটাই কাটে ঘরে বসে কাজ করে। আসলে ভারতের মতো দেশে তো গ্রাফিক উপন্যাস তৈরি হয় না বললেই চলে। তাই ছবি আঁকার যাবতীয় কাজ আসে বিদেশ থেকেই। সেখানে বসে কাজ করলে হয়তো কিছু বাড়তি রোজগার হতে পারত। কিন্তু নিজের দেশের মাটি ছেড়ে যেতে চাননি আনন্দ রাধাকৃষ্ণন। আর মুম্বাই শহরে বসেই তিনি খবর পেলেন, চলতি বছরের আইসনার কমিক ইন্ডাস্ট্রি অ্যাওয়ার্ড পেতে চলেছেন তিনি। হ্যাঁ, যে পুরস্কারকে কমিক জগতের অস্কারও বলা হয়। এই প্রথম সেই পুরস্কারের প্রাপকদের মধ্যে নাম উঠল কোনো ভারতীয়র।

আইসনার পুরস্কারের আগে কমিক জগতের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ছিল কার্বি পুরস্কার। কিন্তু ১৯৮৭ সালে সেই পুরস্কার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মার্কিন কমিক এডিটর ডেভ অলব্রিক শুরু করেন এই নতুন পুরস্কারের আয়োজন। সেই থেকে প্রতি বছর কমিক কাহিনি, গ্রাফিক্স সহ নানা বিষয়ের উপর প্রতি বছর কয়েকজনকে বেছে নেওয়া হয় পুরস্কারের জন্য। তবে এই ৩৪ বছরে কোনো ভারতীয় সেই পুরস্কার পাননি। পাওয়ার কথাও অবশ্য নয়। ভারতে কমিক্স নিয়ে চর্চা আর কতটুকুই বা হয়?  আনন্দও পুরস্কার পেয়েছেন একটি ব্রিটিশ উপন্যাসের জন্যই। ‘ব্লু ইন গ্রিন’ নামের ১৪৫ পাতার এই উপন্যাসের প্রতিটা পাতা এঁকেছেন আনন্দ এবং তাঁর সহকর্মী ব্রিটিশ শিল্পী রাম ভি। দুজনেই এবছর একসঙ্গে গ্রাফিক্সে পুরস্কার পেতে চলেছেন।

আন্তর্জাতিক স্তরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরস্কারগুলির একটি পেতে চলেছেন আনন্দ। স্বভাবতই তিনি খবরটা বিশ্বাস করতে পারেননি প্রথমে। তবে তাঁর মতে, এই পুরস্কার তাঁর কাজের নেশাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। আর একজন ভারতীয় হিসাবে এই সম্মান বাড়তি মাত্রা যোগ করবে বলেও মনে করেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস, এরপর ভারতের প্রকাশক থেকে পাঠকরা প্রত্যেকেই গ্রাফিক উপন্যাসের দিকে কিছুটা আকৃষ্ট হবেন। আর তার ফলে বহু প্রতিভাবান শিল্পী কাজের সুযোগ পাবেন। আনন্দের বিশ্বাস, ভারতের শিল্পীদের সঠিকভাবে কাজে লাগানো হলে জাপানি মাঙ্গার সঙ্গেও টেক্কা দিতে পারে এদেশের গ্রাফিক উপন্যাস। কিন্তু তার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো প্রয়োজন। আপাতত রাম ভি-এর সঙ্গে মিলিতভাবে আরও একটি ইংরেজি উপন্যাসের কাজ শুরু করেছেন আনন্দ। সেটির নাম ‘রেডিও অ্যাপোকেলিপ্স’। ‘ব্লু ইন গ্রিন’ উপন্যাসে এক অস্তিত্ব সংকটে ভোগা শিল্পীর জীবন থেকে শুরু করে এই উপন্যাসে এক মহাবিপর্যয়ের সময়, সবই রঙে-রেখায় ফুটিয়ে তুলছেন আনন্দ। আর প্রতিটা ছবিই যেন জীবন্ত। ভারতীয়দের কাছে আনন্দের এই পুরস্কারজয় নিঃসন্দেহে এক গর্বের বিষয়।

Powered by Froala Editor