কাফকার একগুচ্ছ অপ্রকাশিত চিঠি ও ছবি এবার অনলাইনেই

নিজে হাতেই পুড়িয়ে ফেলেছিলেন নিজের পাণ্ডুলিপির একটা বড়ো অংশ। আর যেটুকু বাকি ছিল, চিঠি লিখে তা পুড়িয়ে ফেলার অনুরোধ করেছিলেন বন্ধু ম্যাক্স ব্রডকে। বার বার সতর্ক করেছিলেন যেন ব্রড ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি এসব লেখার পাঠক না হয়। তার কিছুদিনের মধ্যেই মাত্র ৩৭ বছর বয়সে চিরতরে বিদায় নিয়েছিলেন ফ্রানৎস কাফকা। আর সেইসব লেখারা? কাফকার মৃত্যুর ৯৭ বছর পর এবার প্রকাশ্যে এল সেগুলি। সৌজন্যে ইজরায়েলের জাতীয় গ্রন্থাগার।

কাফকার অপ্রকাশিত চিঠিপত্র ও পাণ্ডুলিপি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে বিতর্ক। আইনি জটিলতার বেড়াজালে আটকে ছিল তার প্রকাশ। শেষ পর্যন্ত ইতি পড়ল সেই মামলায়। এবার কাফকার সেই অমোঘ সৃষ্টিগুলিকে সংরক্ষণ করল ইজরায়েলের জাতীয় গ্রন্থাগার। প্রকাশিত হল তার ডিজিটাল সংস্করণও। এবার একটা ক্লিকেই খুলে যাবে কাফকার হাতে লেখা ‘জিডিটাল পাণ্ডুলিপি’। প্রকল্পের কিউরেটর স্টেফান লিট জানাচ্ছেন, সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত কাফকার আঁকা ১২০টি ছবি এবং ম্যাক্স ব্রডকে লেখা ২০০টি চিঠি সংরক্ষণ করা হয়েছে এই অনলাইন সংগ্রহশালায়। উল্লেখ্য, এর মধ্যে রয়েছে কাফকার আঁকা নিজের এবং তাঁর মায়ের কিছু পোর্ট্রেট। 

১৯২৪ সালে কাফকার মৃত্যুর পর থেকে তাঁর লেখা সমস্ত পাণ্ডুলিপি এবং চিঠিপত্রই ছিল ম্যাক্স ব্রডের কাছে। তবে কাফকার কথা রাখেননি ম্যাক্স। ১৯২৪ সালেই তিনি প্রকাশ করেছিলেন কাফকার লেখা ‘দ্য ট্রায়াল’। ম্যাক্স সেই ‘বিশ্বাসঘাতকা’ না করলে হয়তো বিশ্ব সাহিত্য পেত না তার অমূল্য মণিমাণিক্য। পরে কাফকার লেখা বেশ কিছু গল্পের সংকলনও প্রকাশ করেছিলেন ম্যাক্স। তারপরেই বিশ্বযুদ্ধ। ইহুদি হওয়ায় প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল প্রবল। সেই কারণেই ১৯৩৯ সালে নাৎসি অধিকৃত চেকোস্লোভাকিয়া থেকে তেল আভিভে পালিয়ে যান ম্যাক্স। 

পরবর্তীতে ম্যাক্স অবশ্য নিজের কাছেও রাখেননি কাফকার ঐতিহাসিক লেখাগুলিকে। যাতে কোনো পাঠকের হাতেই না পৌঁছায়, সেজন্য সেগুলি লুকিয়ে ফেলেছিলেন সুইস ব্যাঙ্কের একটি ভল্টে। সেখানেই সংরক্ষিত ছিল কাফকার অপ্রকাশিত বহু নথি, চিঠি এবং পাণ্ডুলিপি। ১৯৬৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর ডায়েরি থেকেই জানা যায় অপ্রকাশিত লেখাগুলির কথা। কিন্তু ব্যাঙ্কের ভল ভেঙে লেখা বের করে আনা তো মুখের কথা নয়। ফলত শুরু হয়েছিল আইনি মামলা। তার গ্রন্থস্বত্বই বা কার কাছে যাবে— সেটাও ছিল অপরিষ্কার। শেষ পর্যন্ত সেই মামলা মিটল পঞ্চম ট্রায়ালে। সুইস আদালতের রায় ঘোষণার পর সেগুলির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় ইজরায়েলের জাতীয় গ্রন্থাগারের হাতে। 

আরও পড়ুন
বইটিতে ফ্রানৎস কাফকা-কে তুলনা করা হয় ড্রাকুলা-র সঙ্গে!

তবে শুধু চিঠি, কবিতা আর আঁকা ছবিই নয়। সুইস ব্যাঙ্কের ভল্ট থেকে পাওয়া গেছে কাফকার একটি নোটবুকও। আশ্চর্যজনকভাবেই তা লেখা হয়েহে হিব্রু ভাষায়। ডায়েরির ধাঁচে সেখানে বিভিন্ন ব্যক্তিগত কথা লিখে রেখেছিলেন কাফকা। শিক্ষক কিংবা বাবার সঙ্গে কথোপকথন, গল্পের চিন্তাভাবনা-সহ একাধিক আকর্ষণীয় তথ্য লুকিয়ে রয়েছে সেই ডায়েরির পাতায় পাতায়। যাকে দুর্লভ বললেও কম বলা হয় হয়তো। তবে এখনও পর্যন্ত এই নোটবুকটি ডিজিটাল মিডিয়াতে পাঠকদের জন্য উপলব্ধ নয়। চলছে সংরক্ষণের কাজ…

আরও পড়ুন
চলে গেলেন ফ্রানৎস কাফকা, ফের ‘বাবা’কে হারাল পড়ুয়া ছেলেটা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মৃত্যুর পর সমস্ত লেখা পুড়িয়ে দিতে বলেছিলেন কাফকা, অনুরোধ রাখেননি বন্ধু

More From Author See More