বিশ্বজুড়ে ৫০ হাজার মৌমাছির ছবি আঁকতে উদ্যোগী মার্কিন শিল্পী

আজ থেকে প্রায় ৮ দশক আগের কথা। গবেষক হ্যাচিনসন এবং রেমন্ড লিন্ডেম্যানের হাত ধরে উঠে এসেছিল একোলজিক্যাল পিরামিডের তত্ত্ব। আসলে প্রত্যেক প্রজাতিই যে পরস্পরের সঙ্গে আন্তর্সংযুক্ত, তাই বুঝিয়েছিলেন তাঁরা। তবে মানুষের কর্মযজ্ঞেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম একটি অংশ ‘পতঙ্গ’। যার ফলস্বরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই গোটা পিরামিডের সাম্য। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানব সভ্যতাও। গবেষক বা বিজ্ঞানী নয়, এবার মানুষকে সচেতন করতে দায়িত্ব তুলে নিলেন শিল্পী। আঁকার মাধ্যমেই আগাম বিপদবার্তা পৌঁছে দিতে অভিনব উদ্যোগ নিলেন মার্কিন চিত্রকার ম্যাথু উইলি।

সময়টা ২০০৮ সাল। অন্য আর পাঁচটা দিনের মতোই শুরু হয়েছিল সকালটা। নিউ ইয়র্কে নিজের বেডরুমেই আঁকার কাজে ব্যস্ত ছিলেন উইলি। তবে হঠাৎই জানলা দিয়ে ঢুকে পড়ে ছোট্ট একটি মৌমাছি। না, তাকে মারতে উদ্যত হননি শিল্পী। বরং সেই অনুপ্রবেশই তাঁকে ভাবিয়ে তোলে। শেষ কবে মৌমাছি দেখেছিলেন তিনি, সেদিন মনে করতে পারেননি উইলি। কারণ পরিবেশের অন্যতম এই পলিনেটররা দূষণ, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং পেস্টিসাইডের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে। ক্রমশ অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাদের অস্তিত্ব। আর যার ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উদ্ভিদের বংশবিস্তারের পথটাই।

মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন করতেই অভিনব উদ্যোগের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন উইলি। ঠিক করে নিয়েছিলেন বিশ্বব্যাপী মোট ৫০ হাজার নির্মাণের দেওয়ালে তিনি ছবি আঁকবেন মৌমাছির। সেই মিশন থেকে এতটুকুও সরে যাননি মার্কিন শিল্পী। বিগতও পাঁচ বছরে মোট সাড়ে ৫ হাজার মাল্টিপ্লেক্স, নাইটক্লাব, স্টেডিয়াম, স্কুল, কলেজ, মিউজিয়ামের দেওয়ালে ছবি এঁকেছেন তিনি। 

তবে উইলি একা নয় এই আন্দোলনে। এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। বিপুল খরচের ভার নিয়েছেন সাধারণ মানুষও। ২০১৫ সালে যখন ফ্লোরিডাতে তিনি শুরু করেছিলেন এই প্রকল্প, সেদিন থেকেই পথযাত্রীরা তাঁর পোস্টার দেখা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অর্থসাহায্য। লকডাউন চলাকালীন দক্ষিণ ইংল্যান্ডের ১৫ বছর বয়সী একটি ছাত্র, তাঁর এই উদ্যোগ দেখে আহ্বান জানায় তার স্কুলেও এই ধরণের চিত্র অঙ্কনের। গত অক্টোবর মাসে ব্রিটেনে গিয়ে সেই কাজ শেষ করেছেন উইলি। যা তাঁর এই স্ব-প্রণোদিত উদ্যোগের প্রথম আন্তর্জাতিক প্রয়াস। আগামীতে ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি এমনকি ভারতেও এই ধরণের শিল্পকলা করার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন তিনি। শুধু মৌমাছিও নয়, রং-তুলিতে ধরা দেবে অন্যান্য পতঙ্গরাও। তবে উইলির মতে, মৌমাছির ছবি আঁকছেন না তিনি। আঁকছেন, অবলুপ্তির দিকে এগিয়ে যেতে থাকা মানুষের অস্তিত্বের ছবিই…

Powered by Froala Editor