৭৫ বছর ধরে ঠিকানা গাছতলা, গ্রামবাসীদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন ওড়িশার বৃদ্ধ

শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সারাবছর তাঁকে দেখা যায় সেই এক গাছের নিচে। তিনি একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে থাকেন, আর সামনে চাটাই পেতে বসে থাকে তাঁর পড়ুয়ারা। সকালে আসে কচিকাচার দল। আর সূর্য ডুবে গেলে মাঠের কাজ সেরে এসে বসেন গ্রামের বয়স্ক মানুষরা। নন্দ প্রাস্তি সারাদিন ধরে তাঁদের বসে থাকেন তাঁদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। আর এর জন্য কোনো পড়ুয়ার কাছ থেকেই বেতন নেন না তিনি। এভাবেই কেটে গেল ৭৫ বছর।

ওড়িশার জাজপুর এলাকার এই প্রত্যন্ত গ্রামে কিছুদিন আগে পর্যন্তও অনেকে নিজের নাম সই করতে পারতেন না। তাঁদের অক্ষরপরিচয় সেখান দিয়ে যাত্রা শুরু নন্দ প্রাস্তির। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তিনি দেখলেন অক্ষরপরিচয় শেখার পরেই তাঁদের মধ্যে ধীরে ধীরে পড়াশোনার আগ্রহ বাড়তে থাকে। আর তখন তিনি ক্রমশ তাঁদের ব্যাকরণ থেকে বিজ্ঞান সবই শেখাতে শুরু করেন। সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফাও দিয়ে দেন এইসব অশিক্ষিত মানুষদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে। আজও তাতে কোনো বিরতি নেই।

বয়স হচ্ছে, শরীর সবসময় সহযোগিতা করে না। কিন্তু তবু লড়াই ছাড়েননি নন্দ প্রাস্তি। ইতিমধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা তাঁকে বহুবার অনুরোধ করেছেন সরকারি খরচে একটি পাকা ঘর বানিয়ে সেখানে ক্লাস নিতে। কিন্তু নন্দ প্রাস্তি সেই গাছের নিচে বসে পড়াতেই ভালোবাসেন। এখানে যে প্রকৃতির সঙ্গে থেকে পড়াশোনা হয়। অবশ্য তাঁর স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই আর এই বারণ শুনবেন না বলে ঠিক করেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান। যাই হয়ে যাক, এভাবে শীতকালে সারাদিন গাছতলায় বসে থাকা একজন বৃদ্ধ মানুষের পক্ষে বিপজ্জনক। তাই ক্লাসরুম তৈরির কাজও শুরু হয়ে যাবে কিছুদিনের মধ্যেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটুকু বদল তো হওয়ারই ছিল। কিন্তু যা বদলায়নি, সেটা হল এই মানুষটি। নন্দ প্রাস্তির মতো মানুষরা আছেন বলেই তো আজও পৃথিবীটা অন্ধকারে ঢেকে যায়নি।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বাড়ি গিয়ে ক্লাস করাচ্ছেন স্কুল শিক্ষকরা, শিক্ষাব্যবস্থার অভিনব ছবি সিকিমে