বাড়ি গিয়ে ক্লাস করাচ্ছেন স্কুল শিক্ষকরা, শিক্ষাব্যবস্থার অভিনব ছবি সিকিমে

ভারতের উত্তর-পূর্বের ছোট্ট রাজ্য সিকিম। পাহাড়ের মাথায় দুর্গম এই রাজ্যে অবস্থানের জন্যই সর্বত্র সহজলভ্য নয় নেটওয়ার্ক পরিষেবা। ফলে সেইসব অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা ‘নিও-নর্মাল’ শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা না দিতে পেরেই পিছিয়ে পড়ছিল স্বাভাবিকভাবেই। এবার তাদের কাছেও শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দিতে অভিনব পন্থা নিল সিকিমের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এবং সরকারও।

বাড়িতে বসেই শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন সিকিমের শিক্ষার্থীরা। তবে ইন্টারনেটের বদলে শিক্ষক-শিক্ষিকারাই বাড়ি এসে ক্লাস করিয়ে যাচ্ছেন তাদের। প্রথমে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই দক্ষিণ সিকিমের এক শিক্ষিকা ইন্দ্রমুখী ছেত্রী এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বিজ্ঞান এবং গণিতের শিক্ষিকা হয়েও এই পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি গিয়ে তিনি বিজ্ঞানের পাশাপাশিই সাধারণ জ্ঞান এবং ইংরাজির ক্লাসও নিচ্ছিলেন। 

পরে এই উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষাদের মধ্যেও। গ্যাংটকেও প্রচলন হয় এই নতুন শিক্ষাব্যবস্থার। সিকিম সরকার এর বিষয়ে অবগত হয়ে সরকারি প্রকল্প গ্রহণ করে শিক্ষাদানের। “হোম স্কুলিং ফর এলিমেন্টারি এডুকেশন” প্রকল্পখাতায় কলমে চালু হয় গতমাসে সিকিমে লকডাউন ওঠার পর থেকেই। 

সিকিমের মোট ১০ হাজার সরকারি স্কুল শিক্ষকদের এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। তাঁদের নিয়ে তৈরি হয় তথ্য তালিকাও। তাঁদের ঠিকানা অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া হয় কাজের অঞ্চল। তাতে অনেকটাই সহজ হয়ে যায় তাঁদের শিক্ষণের কাজও। ইংরাজি শিক্ষিকা নেভিকা কেফলি দিনে ৩৫ জন ছাত্রছাত্রীর বাড়ি গিয়েই এখন পড়িয়ে আসছেন সাহিত্যের পাঠক্রম। ২০ মিনিট করে সময় দিচ্ছেন প্রতি ছাত্রদের। তাতে নতুন জিনিস বোঝানোর পাশাপাশি দিয়ে আসছেন বাড়ির কাজ। সংগ্রহ করছেন বিগত দিনের গোম-ওয়ার্কের খাতাও। 

আরও পড়ুন
পড়ুয়াদের কাছে নেই ফোন, গোটা গ্রামে স্পিকার লাগিয়ে পড়ানো শুরু শিক্ষকের

কেফলির পাশাপাশি আরও কিছু শিক্ষক বেছে নিয়েছেন কম্যিউনিটি হলের পন্থাও। সেখানে একসঙ্গে এক অঞ্চলের বাসিন্দা ৫ জন ছাত্রছাত্রীকে ডেকে ক্লাস করাচ্ছেন তিনি। তাতে খানিকটা হলেও বাড়তি সময় পাচ্ছে পড়ুয়ারা। সেইসঙ্গেই রেডিও এবং আঞ্চলিক টেলিভিশনের মাধ্যমেও শিক্ষাদানের ব্যবস্থা চালু করেছে সিকিম সরকার।

অন্যদিকে সিকিমের মতোই অভিনব প্রকল্প নিয়েছে মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডও। প্রান্তিক অঞ্চলে পেনড্রাইভ কিংবা জেরক্সের মাধ্যমে স্টাডি মেটিরিয়াল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসছেন শিক্ষকরা। দেশের করোনা পরিস্থিতি প্রতিনিয়তই এগিয়ে যাচ্ছে খারাপের দিকে। প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছেন বহু বহু মানুষ। এই আবহে স্কুল খোলা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের এই ব্যক্তিগত লড়াই এবং উদ্যোগ যেন নতুন করে আশা জাগাচ্ছে প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে...

আরও পড়ুন
লকডাউনে জীবিকার সন্ধান, কলেজের ইংরাজি শিক্ষক আজ নির্মাণ প্রকল্পের কুলি

Powered by Froala Editor