পাঁচ মাইল হেঁটে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন শিক্ষক, লকডাউনে মানবিকতার নজির

সুপারহিরো বলতে আমরা সিনেমা কিংবা কমিক্সের নায়কদেরই বুঝি। কিন্তু বাস্তবে মানুষের ভিড়েই লুকিয়ে আছেন হাজার হাজার সুপারহিরো। এই মহামারীর দুর্দিনে তাঁরা পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষের। বুঝিয়ে দিচ্ছেন, সুপারহিরো হতে গেলে বিশেষ পোশাক লাগে না। লাগে না বিশেষ ক্ষমতাও। কেবলমাত্র মনের জোরেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায় অসহায় মানুষের কাছে। এমনই একজন নায়ক, ব্রিটেনের গ্রুমস্‌বাইয়ের ওয়েস্টার্ন প্রাইমারি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক জেন পাওয়েল।

লকডাউনে বন্ধ রয়েছে স্কুল। কিন্তু স্কুলের বাচ্চারা এই দুঃসময়ে খাবার পাচ্ছে তো পরিমাণমতো? এই চিন্তাই ভাবিয়ে তুলেছিল পাওয়েলকে। তাই নিজেই ছাত্রছাত্রীদের খাবারের দায়িত্ব নিলেন। প্রতিদিন একাধিক রুকস্যাক পিঠে নিয়েই লড়াই শুরু করছেন তিনি। দিনে ১৮ কেজি খাদ্যদ্রব্য বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। তাঁর এই সাহায্য পৌঁছে যাচ্ছে প্রায় ৭৮ জন শিক্ষার্থীর কাছে। পাঁচ মাইলের বেশি পথ পায়ে হেঁটেই এই যুদ্ধ জারি রেখেছেন ওই শিক্ষক।

পাওয়েল প্রথম জীবনে সেনা বিভাগে কাজ করতেন। গ্রেনেডিয়ার গার্ডসে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে চলে আসা শিক্ষা জগতে। তারপর ছাত্রছাত্রারীই তাঁর নিকট আত্মীয় হয়ে ওঠে। তবে সচেতনার কথা অবশ্যই মাথায় রাখছেন জেন। দরজার সামনে প্যাকেট করা খাবার রেখে, দূরে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। দূরত্ব বজায় রেখেই বাইরে থেকে ডাকছেন তাদের। যতক্ষণ না তারা এসে খাবার সংগ্রহ করে, অপেক্ষা করছেন তিনি।

তাঁর এই কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কিম লিচ এবং আরো এক সহকারী শিক্ষক। যে সমস্ত ছাত্রের বাড়ি অপেক্ষাকৃত দূরে, তাদের পরিবারের জন্য গাড়ি করে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। জেন জানান, এই সকল ছাত্রছাত্রীদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা সংকটজনক। কাজেই, এই সাহায্য পৌঁছে দেওয়াও প্রাথমিক কর্তব্য তাঁদের।

উল্লেখ্য, গ্রুমস্‌বাই অঞ্চলে ৩৪ শতাংশ শিশুর পরিবারের আর্থিক অবস্থাই দারিদ্র্যসীমার নীচে। ওয়েস্টার্ন প্রাইমারি স্কুলের মোট পড়ুয়ার ৪১ শতাংশ শিশুকে দেওয়া হয় বিদ্যালয়ের বিনামূল্যের খাবার। অনেকটাই আমাদের এখানকার মিড-ডে মিলের মতো।

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কিম জানান, লকডাউন ঘোষণার পরই জরুরি তৎপরতায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় স্কুলে। পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক, এই পরিষেবা বন্ধ করা হবে না। এমনটাই আশ্বাস দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। জানান, এই কঠিন পরিস্থিতিতেও খুশির আলো ঝলমল করতে দেখা যাচ্ছে পড়ুয়াদের। বাড়ির জানলা দিয়ে কথাও হচ্ছে অনেক ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে। এভাবেই কিম আর পাওয়েলের মতো মানুষের কাছে সহজ হয়ে যাচ্ছে এই কঠিনতম দিনগুলোও। অনেকে দরজায় তাঁদের জন্য রেখে দিচ্ছে গ্রিটিংস কার্ড, ধন্যবাদ বার্তা। সত্যিই তো, সুপারহিরোদের এই ধন্যবাদটুকু ছাড়া আর কী-ই বা দেওয়া যায়!