যৌথ পরিবার

এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্য কোথাও, এ কথা ভাবতে ভাবতে খুব মেঘ করে এল আজ। আসলে এ বাড়ি যেন সেই আদ্যিকালের হাতঘড়ি, মাঝে মাঝে দম দিতে হয় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে৷ আগে ঘর বলতে ছিল আড়াইখানা, যেন দাবায় ঘোড়ার চাল। আর ওই অর্ধেক ঘরটুকুই ছিল আমার, নিজেকে জেতানোর প্রথম দান। কিন্তু তখনও জানতাম না, জিততে গেলে মাঝে মাঝে দান ছেড়ে দিতে হয় প্রতিপক্ষকে৷ এ জীবনে জেতার যে আদৌ কিছু নেই, সেসব একটু বড়ো হয়ে বাবার কাছে শিখেছিলাম।

উঠোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসত অদৃশ্য লেগস্পিন, আউট হলেও হাতের উইকেট শেষ হত না কোনদিনই। বেলা গড়িয়ে এলে, ঘামে ভিজে উঠতাম আমি আর বাবা, অথচ পার্টনারশিপে যার সাথে ব্যাট করা হল না এখনও। নিজের হাতে গড়া ভিটে, শক্ত মাটিতে বল কতখানি ঘুরবে, তার চেয়ে বোধহয় কেউ-ই ভালো জানতেন না। ঘূর্ণিময় এই সংসারে এক আশ্চর্য হাঁড়ি ছিল, যার ভাত ফুরোত না কোনদিনই, কেউ এলে দু-গরাস জুটে যেত ঠিক। অথচ পরস্পরকে ভরসা না করতে পেরে ভাগ করে খাওয়ার দিন একসময় ফুরিয়ে এল, ক্রমশ আলাদা হল দক্ষিণের হাওয়া আর উত্তর-পূর্বের মেঘ। ততদিনে ঘর ভেঙে আরও খান দুয়েক ঘর হয়েছে বাড়িতে।

মাংস ছিল এক আশ্চর্য হিংসে করার মত খাবার, রান্না শেষ হতেই বন্ধ হয়ে যেত একের পর এক দরজা। বাড়ির এখন বয়স হয়েছে, খানিকটা একাকী হতেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে রান্নাঘরের কালো ঝুল, পলেস্তরা আর পুরনো আসবাব। ঝড়-জলে ভিজে ভিজে সাঁকো বাধার দিন ফুরিয়ে এসেছে আমাদের। আজকাল বাড়ির কথা ভাবতেই এসব ভেঙে পড়ার দিন মনে আসে। যে কোনোদিন বিক্রি হয়ে যাব আমরাও, এই ভেবে এখন বাবার ঘাড়ের কাছে ঝুলে থাকে এক দীর্ঘকালীন মেঘ, ফেটে গেলেই অচিরে বৃষ্টি নামবে…