করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে যখন গোটা পৃথিবী স্তব্ধ, তখন আরেক অজানা মহামারীর কবলে পড়েছে হাতিরা। একটা দুটো করে মৃত্যু শুরু হলেও ক্রমশ সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে। কোথাও হঠাৎ সুস্থ হাতি মুখ থুবড়ে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে তো কোথাও ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে স্নায়বিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রাণ ত্যাগ করছে হাতিরা। এমনই রহস্যজনক মৃত্যুর কবলে আফ্রিকার বতসোয়ানা দেশের কয়েক'শ হাতি। গত দুমাসে পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।
মে মাসের শুরু থেকেই বতসোয়ানায় একাধিক হাতির রহস্যমৃত্যুর খবর শোনা গিয়েছিল। তখন বিষয়টা নিয়ে সেভাবে কেউ দৃষ্টি না দিলেও, একমাসের মধ্যে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৬৯-এ। আর জুন মাসে সংখ্যাটা আরও বেড়ে যায়। এখনও অবধি সেখানে ৩৫০টির বেশি হাতির মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। বাকিদের শারীরিক অবস্থাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। একের পর এক হাতির মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা।
ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল পার্ক রেসকিউ সংস্থার কর্ণধার ডা. নিয়াল ম্যাক-কানের মতে, স্মরণযোগ্য ইতিহাসে এমন মৃত্যুর ঘটনা আর ঘটেনি। এখনও অবধি কারোর মৃত্যুর কারণ স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি। তবে চোরাশকারিদের দেওয়া বিষের কারণেই মৃত্যু ঘটেছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। অন্যদিকে কারোর কারোর মতে, কোনো বিষাক্ত অণুজীবের কারণেও মৃত্যু ঘটে থাকতে পারে। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য অনুযায়ী মৃত্যুর আগে অনেক হাতিকে চক্রাকারে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। অর্থাৎ তাদের স্নায়বিক ভারসাম্য যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর পিছনেও বিষক্রিয়াকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে পরিস্থিতি দুমাস ধরে ভয়ঙ্কর আকার নিলেও এখনও বৎসোয়ানা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। এমনকি কোনো নমুনা পরীক্ষা করে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের ব্যবস্থাও করা হয়নি। সরকারের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ম্যাক-কানের মতো অনেকেই। কিছুদিন আগে হাতি শিকারকে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল বতসোয়ানা সরকার। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, হাতির সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতেও কেন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, তার যথার্থ কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না কেউই।
Powered by Froala Editor