বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা, বিচ্ছিন্ন মায়ানমারের আন্দোলনকারীরা

সরকারি সংবাদমাধ্যম বারবার বলে যাচ্ছে, আসলে কিছুই হয়নি। কেবল আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন সু কি। দোষী প্রমাণিত হলে তিনি শাস্তি পাবেন। কিন্তু মায়ানমারের বাস্তব পরিস্থিতি একদমই উল্টো। কিছুদিন আগে পর্যন্তও ইন্টারনেটের দৌলতে সেইসব ছবি পৌঁছে যাচ্ছিল পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তে। সাধারণ মানুষের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে বর্মি সেনা। ঘরে ঢুকে মুখ বেঁধে রেখে যাচ্ছেন কারোর। না, আজ আর সেইসব ছবিও দেখা যাচ্ছে না ইন্টারনেটে। সারা দেশে ইন্টারনেট পরিষেবাই বন্ধ। এভাবেই গোটা পৃথিবী থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন মায়ানমারের মানুষ।

মায়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের শেষে ২০১১ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন সু কি। মায়ানমার তো বটেই, সু কি-র খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারা পৃথিবীতে। নোবেল শান্তি পুরস্কারেও সম্মানিত হন তিনি। কিন্তু মায়ানমার সামরিক বাহিনী তাদের হৃত ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠে। ২০২০ সালের নির্বাচনে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন। কিন্তু মানুষের রায়ে আবারও সরকার গড়লেন সু কি। আর এর পরেই শুরু হল প্রত্যক্ষ গৃহযুদ্ধ। ১ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হল সু কি-কে। আর এরপরেই শুরু হল নতুন করে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার কাজ।

রেঙ্গুন সহ নানা শহরে কিন্তু মানুষ জোট বাঁধতে শুরু করল একে একে। যে গণতন্ত্র তাঁরা রক্ত দিয়ে অর্জন করেছেন, তাকে এবাবে হারাতে রাজি নন কেউই। মানুষের প্রতিরোধের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হল সামরিক অত্যাচার। কাঁদানে গ্যাস বা জলকামান তো তুচ্ছ বিষয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিবাদের শাস্তি মৃত্যু। এমনকি শিশুদেরও রেহাই দিল না বর্মি সেনাবাহিনী। এমনকি, ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পেলেন না মহিলারাও। সামরিক বাহিনীর পরিসংখ্যান বলছে, এক মাসে ২১৭ জন মারা গিয়েছেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে। তবে বাস্তব সংখ্যাটা অবশ্যই তার থেকে অনেক বেশি।

মায়ানমারের মানুষ তাঁদের অবস্থা তুলে ধরতে ইন্টারনেটকেই হাতিয়ার করেন। কিন্তু সেই চেষ্টাও ব্যর্থ করে দেয় সেনাবাহিনী। তাঁদের সরকারি সংবাদমাধ্যম অবশ্য বলছে মানুষ স্বেচ্ছায় ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করছে। হ্যাঁ, এমনই হাস্যকর সমস্ত দাবি বিশ্বের সামনে তুলে ধরে তাঁরা বলতে চাইছেন সব স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। তবে ইতিমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে জাতিপুঞ্জও। কিছুদিনের মধ্যেই মায়ানমারের অবস্থা নিয়ে আলোচনার ডাক দিয়েছে জেনেভা। এই গৃহযুদ্ধের অন্তিম পরিণতি কী, তা জানেন না কেউই।

আরও পড়ুন
ভারতে আশ্রয় নিলেন মায়ানমারের পুলিশ আধিকারিকরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অগ্নিগর্ভ মায়ানমার, ‘ঢাল’ নিয়ে পথে সাধারণ মানুষ

More From Author See More