সু কি’র মুক্তির দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ মায়ানমারে, শাসকের অস্ত্র জলকামান-রাসায়নিক

গণতন্ত্রকে ‘অস্বীকার’ করেই ক্ষমতায় সেনাবাহিনী। বন্দি রাষ্ট্রনেতা সু কি। তবে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় চুপ নেই মায়ানমারের সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন তাঁরা। গত শনিবার থেকেই রাজধানী নাই পাই তাও-এ অবস্থান নিয়েছেন কয়েক হাজার নাগরিক। অবরোধ ভাঙতে মায়ানমার পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ব্যবহার করছে জলকামান, রাসায়নিক। কিন্তু তারপরেও টানা তিন দিন ধরেই ‘মুক্তি চাই সু কি-র’ দাবিতে কাঁপছে মায়ানমায়ের পথঘাট।

গত এক দশকে এত বড়ো স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ মায়ানমারে এই প্রথম। এর আগে ২০০৭ সালে মায়ানমারের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের পথে নামতে দেখা গিয়েছিল। সেই স্যাফরন রেভোলিউশনকেই বর্মার সাম্প্রতিক সময়ের বৃহত্তম প্রতিবাদ বলে ধরে নেওয়া হয়। পুলিশের গুলিতে সেবার মারা গিয়েছিলেন কয়েক ডজন সন্ন্যাসী। প্রতিবাদীদের সংখ্যার নিরিখে সেই আন্দোলনকেও যেন ছাপিয়ে গেল এই প্রতিবাদ।

তবে শুধু রাজধানীতে নয়, ম্যান্ডলে-ইয়াঙ্গুনের মতো শহরগুলিতেও সমানভাবে চলছে প্রতিবাদ। অংশ নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। যার মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, ব্যাঙ্ককর্মী, সরকারি কর্মচারী ও শিল্পীরাও। এমনকি এই আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের মুখও। উদ্দেশ্য একটাই, একনায়কতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটানো। 

তবে শান্তিপূর্ণ অবস্থান থাকার পরেও সোমবার সকালে জলকামান ব্যবহার করে সেনাবাহিনী। তবে বিতর্ক উঠে আসে অন্য জায়গায়। জলকামান ব্যবহারের পর বিক্ষোভকারীদের নাক-মুখ থেকে রক্ত ঝরার ছবি সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ধারণা করা হচ্ছে, জলের সঙ্গেই সেখানে ব্যবহৃত হয়েছিল বিষাক্ত রাসায়নিক। তবে এখানেই থেমে নেই শাসকরা। রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়েছে সতর্কবার্তা। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে অবস্থান না সরলে আরও কড়া পদক্ষেপ নেবে সেনাবাহিনী।

তবে এদিন জলকামান ব্যবহার আগে কোনোরকম সতর্কতাই জারি করেনি প্রশাসন। সংবাদ মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণও সামরিক বাহিনীর হাতেই। তবে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিস্থিতি সরাসরি সম্প্রচারিত করেন বিক্ষোভকারীরা। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। বন্ধ করে দেওয়া হয় ট্যুইটারও। তবে আন্তর্জাতিক স্তরে সাড়া পড়ে যাওয়ায়, শেষ অবধি ভাবমূর্তি বজায় রাখতে পুনরায় ইন্টারনেট চালু করেছে মায়ানমার প্রশাসন। 

অবস্থানকারীরা জানিয়েছেন, যতদিন না সু কি’র মুক্তি মিলছে চলবে প্রতিবাদ। অন্যদিকে এই গণবিস্ফোরণ ঠেকাতে ট্যাংক, সাজোয়া গাড়ি, জলকামান, সশস্ত্র সেনা— সবই মজুত করছে মায়ানমারের ক্ষমতাসীন প্রশাসন। এখন পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয় সেটাই দেখার। আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে আবার হয়তো ২০০৭ সালের মতোই রক্তাক্ত হয়ে উঠবে মায়ানমার। তবে সেই উত্তর একমাত্র দিতে পারে সময়ই…

আরও পড়ুন
সামরিক শাসন শুরু মায়ানমারে, গ্রেপ্তার সু কি-সহ ২৪ রাষ্ট্রনায়ক

Powered by Froala Editor