কথা হয় শিসের সুরে, ‘সেরা গ্রামীণ পর্যটনকেন্দ্র’ মেঘালয়ের কোংথং?

পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ঘন পাইনের বন। তলা দিয়ে শব্দ করে একটানা বয়ে চলেছে পাহাড়ি ঝোরা। মৃদুমন্দ বাতাসে দুলছে তার ওপরে ঝুলে থাকা গাছের শিকড় দিয়ে বাঁধা ছোট্ট সেতু। আর ছবির মতো সুন্দর এই প্রেক্ষাপটকেই আর মায়াবী করে তুলছে সুরেলা ধ্বনি। শুনলে মনে হতে বাধ্য, কোনো নাম-না-জানা পাখি হয়তো গান শুনিয়ে চলেছে এক নাগাড়ে। তবে একেবারেই ব্যাপারটা তেমন নয়। বরং, এই কিচিরমিচির মানুষেরই।

হ্যাঁ, মেঘালয়ের (Meghalaya) বুকেই রয়েছে এমনই অদ্ভুত এক গ্রামের অস্তিত্ব। যেখানে বাসিন্দারা কথা বলেন পাখিদের ভাষায়। শিস দিয়ে। শতকের পর শতক ধরে এটাই রীতি সেখানকার। এবার মেঘালয়ের সেই কোংথং (Kongthong) গ্রামই মনোনয়ন পেল রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘সেরা ট্যুরিজম ভিলেজ’ সম্মানের জন্য। পর্যটন, উদ্ভাবনা, ঐতিহ্য, গ্রামীণ বিকাশ, বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ-সহ মোট ১২টি বিষয়ের পর্যালোচনা করে প্রতিবছর এই সম্মাননা দিয়ে থাকে জাতিসংঘের (United Nations) ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন শাখা। কোংথং ছাড়াও চলতি বছরে জাতিসংঘের এই বিশেষ সম্মাননার জন্য মনোনীত হয়েছে ভারতের আরও দুটি গ্রাম— তেলেঙ্গানার পোচামপল্লি এবং মধ্যপ্রদেশের লাঘপুরা খাস। তবে মূল পুরস্কারের অন্যতম দাবিদার কোংথং-ই।

মেঘালয়ের এই প্রান্তিক গ্রামে বসবাস আনুমানিক ৭০০ গ্রামবাসীর। সকলেই খাসি সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে শুধু কথা বলার ভাষাতেই অনন্য নন তাঁরা। বরং, তাঁদের পরিচয়ের সঙ্গেও মিশে রয়েছে সুরের ছটা। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর, তাদের নাম রাখা হয় বিভিন্ন শিসের মাধ্যমেই। বর্তমান সময় এবং কর্মক্ষেত্রের জন্য অক্ষরভিত্তিক নাম থাকলেও, তা নিজগ্রামে প্রায় ব্যবহৃত হয় না বললেই চলে। 

তবে ঐতিহ্যবাহী এমন একটা জনপদ সম্পূর্ণ অজানা ছিল আজ থেকে বছর তিনেক আগেও। এমনকি মেঘালয়ের বুকেও কোংথং-এর ব্যাপারে জানতেন হাতে গোনা কিছু মানুষ। ২০১৮ সালে বিহারের রাজ্যসভার সাংসদ রাকেশ সিনহা অদ্ভুত এই জনপদের ব্যাপারে জানতে পেরে দত্তক নেন কোংথং-কে। তারপরই সর্বসমক্ষে আসে কোংথং-এর অস্তিত্ব। তাঁর হাত ধরেই আবেদন পৌঁছেছিল জাতিসংঘে।

আরও পড়ুন
মানুষের মতোই সংস্কৃতি বদলায় পাখিদেরও, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা

গত বছরের শুরুর দিকে কোংথং-এর ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। পরিবহন ব্যবস্থা-সহ গ্রামের অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নেই আগামীতে ব্যবহৃত হবে এই অর্থ সাহায্য। পাশাপাশি পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থারও বেশ উন্নতি হবে বলেই আশাবাদী স্থানীয়রা। আর সেদিক থেকে জাতিসংঘের সেরা গ্রামীণ পর্যটনকেন্দ্রের মনোনয়ন অনেকটাই সাহায্য করবে কোংথং-এর ভাগ্য পরিবর্তনে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো।

আরও পড়ুন
শব্দ নয়, শিস দিয়েই ভাব বিনিময় করেন তাঁরা; অবলুপ্তির পথে তুরস্কের ‘পাখি ভাষা’

Powered by Froala Editor

Latest News See More