চরম দুর্ভিক্ষের শিকার কঙ্গোর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ, রিপোর্ট প্রকাশ জাতিসংঘের

অধিকাংশ মানুষেরই আর্থিক সামর্থ্য নেই। ফলে কয়েক সপ্তাহ দানাপানি ঢোকেনি বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে। আর সামর্থ্য থাকলেও, মানুষ খাবার কিনবে কোথা থেকে? সারা দেশেই যে হাহাকার। বুনো ঝোপঝাড়ের কন্দ, ডাল কিংবা কাসাভা গাছের পাতা জলে সেদ্ধ করেই চলছে আহারাদি। হ্যাঁ, বর্তমান কঙ্গোর ছবি এমনটাই। সে-দেশে দুর্ভিক্ষের শিকার ২ কোটি ৭৫ লক্ষ মানুষ। যার পরিমাণ দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। সম্প্রতি জাতিসংঘ প্রকাশ করল এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট।

জাতিসংঘের দুটি পৃথক শাখা ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম’ এবং ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশন’ যৌথভাবে একটি সমীক্ষা চালায় কঙ্গোতে। দুই সংস্থার বিবৃতিতেই কঙ্গোর কৃষি ও খাদ্য সংকটকে অভিহিত করা হয়েছে ‘অত্যন্ত সংকটজনক’ হিসাবে। ৭০ লক্ষ মানুষের অবস্থা এমনই শোচনীয় যে জরুরি তৎপরতায় খাদ্য পৌঁছে দিতে না পারলে, মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে তাঁদের।

গোটা কঙ্গো জুড়েই এই খাদ্য-সংকটের ছাপ। তবে কঙ্গোর পূর্ব প্রদেশের ইতুরি, উত্তর ও দক্ষিণ কিভু, তাঙ্গানিকা এবং মধ্য কাসাইসে চরমে পৌঁছেছে অবস্থা। কিন্তু এর কারণ কী? রিপোর্ট জানাচ্ছে, ইতুরি, কাসাইস ইত্যাদি প্রদেশগুলিতে বেশ কিছু কাল ধরেই চলছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আর গৃহযুদ্ধের এই পরিস্থিতিই সম্পূর্ণভাবে দমিয়ে দিয়েছে খাদ্য উৎপাদন। পাশাপাশি, কঙ্গোতে আশ্রয় নিয়েছেন বহু শরণার্থী। তাঁরা সকলেই শিকার এই দুর্ভিক্ষের। আবার কঙ্গো ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও, কিছু দেশবাসী ফিরে এসেছেন সেখানে। বর্তমানে তাঁদের উপার্জন, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই কোনো। জুটছে না খাদ্যও।

এখানেই শেষ নয়। বিগত এক বছরে ঘটে গেছে একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগও। বন্যা, ধ্বস, অগ্নিকাণ্ড— বাদ ছিল না কিছুই। তার ওপর সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস মহামারী এবং অর্থনৈতিক মন্দা কঙ্গোর এই অস্থির পরিস্থিতিতে শেষ কফিন পুঁতে দিয়েছে। তবে অবাক করার বিষয় হল, আফ্রিকার এই দেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। গোটা কঙ্গো জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে হিরের খনি। তা থেকে আয় মন্দ নয় সরকারের। তবে সেই অর্থ মুষ্ঠিমেয় কিছু ব্যক্তির হাতে। এককথায় সমবণ্টন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের একটি বড়ো অংশের মানুষ। 

আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে আফ্রিকান হাতি

রিপোর্ট বলছে দেশের ২০ শতাংশ পরিবারই চরমতম খাদ্য-সংকটের শিকার। কোথাও গোটা সপ্তাহে হাঁড়ি চড়ছে দু-তিন বার। আর তাঁদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যত দ্রুত সম্ভব খাবারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আর এই পরিস্থিতি সাময়িকভাবে সামাল দেওয়ার জন্য দরকার আনুমানিক ৬৬ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটবে না চিরতরে। বরং কঙ্গো প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে জন্ম ও জীবিকা নিয়ন্ত্রণের প্রেক্ষিতে। তবে এই পরিস্থিতিকে আয়ত্তে আনতে কতটা তৎপর সে দেশের প্রশাসন, সন্দেহ থেকে যাচ্ছে তা নিয়েই…

আরও পড়ুন
ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের কবলে ইথিওপিয়া, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ, চলছে ‘মিলিটারি-শাসন’ও

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চরমতম দুর্ভিক্ষ সুদানে, খিদের জ্বালায় মৃত্যুমুখে অসংখ্য শিশু