প্রতিবেশীদের কাছে ‘রিয়েল লাইফ মোগলি’, সামাজিক নিগ্রহের শিকার আফ্রিকার যুবক

বছর একুশের এক আফ্রিকান আদিবাসী যুবক। বড়ো হলেও, ঠিক বাকি পাঁচজনের মতো তার আচরণ নয়। ও কথা বলতে পারে না, কেমন ‘অদ্ভুত’ দেখতে; তার ওপর বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। সেখানেই নাকি থাকে। এমন মানুষ তো আমাদের কাছে খানিক ‘আলাদা’ই! আর যারাই একটু আলাদা, তাঁদেরকে নিয়ে একঘরে করে ফেলা আমাদের চিরকালের অভ্যাস। ঠিক এরকমটাই ঘটেছে আফ্রিকায়। তথাকথিত সভ্য সমাজের হেনস্থার শিকার এক প্রতিবন্ধী যুবক। কারণ? সে যে ‘স্বাভাবিক’ নয়!

রাওয়ান্ডার জাঞ্জিমান এলি ছোটো থেকেই স্বাভাবিক নিয়মে বেড়ে ওঠেনি। তার জন্মের আগে আরও পাঁচ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন মা। কিন্তু পাঁচজনই মারা যায়। এলি বেঁচে যায় বটে; কিন্তু থেকে যায় অসুবিধা। ছোটো থেকেই সে কথা বলতে পারে না একদমই। শুনতেও পারে না। উপরন্তু, ওর মাথাটিও বাকি শরীরের তুলনায় বেশ ছোটো। ডাক্তারি পরিভাষায় এই রোগটির নাম ‘মাইক্রোসেফ্যালি’। কাজেই সেই শারীরিক অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পায় শরীরেও। মুখটিও একটু ‘অদ্ভুত’। তার ওপর জঙ্গলে জঙ্গলে দিন কাটায়। ঠিক যেন জাঙ্গল বুকের ‘মোগলি’…

শারীরিক হোক বা মানসিক, একটু অস্বাভাবিকতা দেখলেই তাঁকে নিয়ে শুরু হয়ে যায় সমাজের ‘দাদাগিরি’। উঠতে বসতে হেনস্থা, সবার সঙ্গে মিশতে না দেওয়া, নিগ্রহ— এ তো হরদম লেগেই আছে। পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় ‘অলিখিত নিয়ম’ই হয়ে গেছে এটা। মানবাধিকার সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলির আন্দোলনকে থোড়াই কেয়ার! আফ্রিকাও এই বৃত্তের বাইরে নয়। রাওয়ান্ডায় জাঞ্জিমান এলিও প্রতিনিয়ত এমন অত্যাচারের শিকার। তাঁর রোগটি নিয়ে কেউ প্রশ্ন করে না, স্নেহের চোখে দেখে না; পারলে উঠতে বসতে নিগ্রহ করে। এর জন্য পড়াশোনাও করতে পারেনি এলি। বনে জঙ্গলেই ঘুরে ঘুরে কাটে তাঁর। আর প্রতিবেশীরা? তাঁরা ওর নাম দিয়েছেন ‘রিয়েল লাইফ মোগলি’। আর যেহেতু সে বলতে আর শুনতে পারে না, তাকে যত খুশি অত্যাচার করো।

জাঞ্জিমান এলি’র ঘটনা এই পৃথিবীর বুকে হরদম ঘটে যাচ্ছে। শহর হোক বা গ্রাম, আফ্রিকা হোক বা আমেরিকা— সমস্ত জায়গায় মানুষ নিজের ক্রুর মনোভাব ঢেলে দিচ্ছে এই অসহায়দের ওপর। তাঁরা আহাজ্য চাইছে; কিন্তু শোনার মানুষ কই? এলির মায়ের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়েই কথা বলেছিল সেখানকার এক সংবাদমাধ্যম। সম্প্রতি জাঞ্জিমান এলি’র জন্য সেই সংস্থা অর্থ সংগ্রহ করছে। একটা সময় পর সেই টাকা পৌঁছে যাবে এলি’র পরিবারের কাছে। কিন্তু সমাজের চোখ কি বদলাবে? আরও হাজার হাজার প্রতিবন্ধী এলি কি খোলা আকাশে শ্বাস নিতে পারবে না? প্রতিটা মহলে প্রশ্ন তোলার আগেও, আমরা নিজেদেরই এই প্রশ্নটি করি। আঙুল উঠুক নিজেদের দিকে। আর পারলে বাড়ির পাশের ওই ছেলেটি বা মেয়েটির পাশে গিয়ে বসি। একটু গল্প করি। বন্ধু হয়ে উঠি…

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More