২০২০-তে বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধে ৮৫০০ শিশুসৈনিক, চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট জাতিসংঘের

আঠারো বছরের গণ্ডি পেরোয়নি কেউই। কেউ হয়তো স্কুলের ছাত্র। কেউ আবার পড়াশোনা শেষ করে বাবার সঙ্গে হাত লাগিয়েছে কৃষিকাজে। এমন কিশোরদেরই দলে দলে যোগ দিতে হয়েছিল সেনাবাহিনীতে। দুই বিশ্বযুদ্ধেরই সাধারণ ছবি ছিল এমনটাই। এবার সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিই ফিরে আসছে একুশ শতকের বুকে। আসছে না বলে বরং এসেছে বলাই ভালো। সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা পরিষদের রিপোর্টে উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জাতিসংঘের সদ্যপ্রকাশিত রিপোর্ট জানাচ্ছে, বিভিন্ন দেশে সামরিক যুদ্ধের গত বছর অংশ নিয়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার শিশু। যার মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ২ হাজার ৬৭৪ জন। আহতের সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও বেশি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে শিশুহত্যা, অপহরণ, শিক্ষা ও অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত শিশুদের পরিসংখ্যান নির্ণয়ের জন্য একটি বিশেষ সমীক্ষা করেছিল জাতিসংঘ। আর তা করতে গিয়েই দেখা যায় শুধু অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না তারা, বরং তাদের হাতে বন্দুক ধরিয়ে দিয়ে পাঠানো হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে। 

শিশু অধিকার লঙ্ঘনের এই ঘটনা সবথেকে বেশি ঘটেছে কঙ্গো, আফ্রিকা, সিরিয়া, ইয়ামেন এবং আফগানিস্তানে। তবে শুধুই যে সরকারি সেনাবাহিনীতেই কাজ করতে হচ্ছে শিশুদের, এমনটা না। পাশাপাশি গৃহযুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বিভিন্ন সহিংস গোষ্ঠীও হাতিয়ার করে নিয়েছে শিশুসৈনিকদের। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশগুলির একটি বিশেষ তালিকা প্রস্তুত করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশগুলির ওপরে বাড়ানো হবে আন্তর্জাতিক চাপও, এমনটাই জানাচ্ছেন রাষ্ট্রপুঞ্জ-প্রধান অ্যান্টোনিও গুতেরেজ।

তবে এই তালিকা ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে বিতর্ক। সৌদি আরব এবং ইজরায়েলকে যাতে এই কালোতালিকায় না রাখা হয়, সেই আবেদন করেছিলেন সেখানকার রাষ্ট্রনেতারা। শেষ পর্যন্ত তা মেনেও নেয় জাতিসংঘ। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে শিশুদের পাঠানো না হলেও, শিশু অধিকারের নিরিখে বেশ পিছিয়ে আছে আরবের এই দুই দেশ— স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সে-কথা।

আরও পড়ুন
ইথিওপিয়ার গৃহযুদ্ধ-পরিস্থিতি, খাদ্যসংকটে ৩৩ হাজার শিশু

অন্যদিকে এই তালিকায় বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে মায়ানমার ও সিরিয়ার নাম। শিশুহত্যার সঙ্গে যৌননিগ্রহ ও সহিংস হামলার অভিযোগ উঠেছে এই দুই দেশের বিরুদ্ধে। জাতিসংঘ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে যাতে দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে তারা। অন্যথায় পরিস্থিতি হয়ে উঠতে চলেছে ভয়াবহ। কিছুদিন আগেই শিশুশ্রম বিষয়ক একটি সমীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেছিল জাতিসংঘ। তাতে স্পষ্টতই ফুটে উঠেছিল মহামারীর মধ্যে লাফিয়ে বেড়েছে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা। তবে বাস্তবে যে বিশ্বজুড়ে শিশুদের বর্তমান পরিস্থিতি আরই ভয়াবহ— তা প্রকাশ্যে এল এবার। কুঁড়ি থেকে ফুল ফোটার আগেই যেন তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে মানবসভ্যতা। এই নির্মমতার শেষ কোথায়, জানা নেই কারোরই…

আরও পড়ুন
মোবাইল অ্যাপেই জানানো যাবে অভিযোগ, শিশু নির্যাতন রুখতে উদ্যোগ রাজ্যের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
২০ বছরে প্রথমবার শিশুশ্রমিকের সংখ্যাবৃদ্ধি, উদ্বেগে ইউনিসেফ

More From Author See More

Latest News See More