ধর্মান্তকরণে ব্যর্থ হয়ে হত্যা? পরিত্যক্ত স্কুলে ২১৫টি শিশুকঙ্কাল, বাড়ছে রহস্য

পড়াশোনার জন্য স্কুলে গিয়েছিল তারা। তারপর আর ফেরেনি। বাড়ির লোকেরা অনেক অনুসন্ধান করেছেন। কিন্তু কিছুতেই কারোর হদিশ পাওয়া যায়নি। এভাবেই কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক দশক। পরিবারের সদস্যরাও হয়তো মারা গিয়েছেন সময়ের নিয়মে। অবশেষে সন্ধান পাওয়া গেল সেই নিখোঁজ শিশুদের। পরিত্যক্ত স্কুলবাড়ির নিচেই পাওয়া গেল ২১৫টি শিশুর কঙ্কাল। হ্যাঁ, ২১৫টি। ১৯৭৮ সাল থেকে বন্ধ হয়ে আছে কানাডার এই আবাসিক স্কুল। তার নিচেই এতদিন লুকিয়ে ছিল এতগুলি মৃতদেহ।

কানাডার আবাসিক স্কুলের ইতিহাস উত্তর আমেরিকার এক কলঙ্কিত অধ্যায়। উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দী জুড়ে এই স্কুলগুলিকে ঘিরেই চলেছে ধর্মান্তকরণের এক ঘৃণ্য প্রক্রিয়া। ইংল্যান্ডের নানা দেশ তখন উত্তর আমেরিকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পর উপনিবেশ তৈরির চেষ্টা চলেছে আরও উত্তরে। ১৮৬৫ সাল নাগাদ প্রথম ব্রিটিশ কলোম্বিয়া প্রদেশে শুরু হয় আবাসিক স্কুল। প্রকাশ্যে এইসমস্ত স্কুলের উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো। কিন্তু গোপনে চলত মূলত ধর্মান্তকরণ। কখনও কখনও তা রীতিমতো বল প্রয়োগ করে। এই ইতিহাস মোটামুটি জানা। তবে সম্প্রতি উঠে এসেছে বেশ কিছু মর্মান্তিক তথ্যপ্রমাণ। আর তার থেকে বোঝা যায় অত্যাচার করেও ধর্মান্তরিত করা না গেলে শেষ পর্যন্ত শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করতেও পিছপা হত না ঔপনিবেশিক শাসকরা।

কেমলুপ ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল তৈরি হয় আনুমানিক ১৮৯০ সাল নাগাদ। তারপর প্রায় ৯০ বছর ধরে রমরমিয়ে চলেছে। এর মধ্যে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে কেমলুপ অঞ্চলের প্রাচীন জনগোষ্ঠীও। তবে এর সঙ্গে যে আরও মর্মান্তিক ইতিহাস জড়িয়ে আছে, তা জানতে আরও সময় লেগে গিয়েছে। শুক্রবার কেমলুপ প্রশাসনের তরফ থেকে একটি সাংবাদিক বিবৃতিতে জানানো হয় এই মৃতদেহ উদ্ধারের খবর। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে কানাডাজুড়ে। সরকারের পক্ষ থেকেও এই মর্মান্তিক ইতিহাসের বিষয়ে লজ্জা প্রকাশ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সমস্ত আদিবাসী মানুষের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

২০০৮ সালে প্রথম রেসিডেন্সিয়াল স্কুলগুলির অন্ধকার ইতিহাস প্রকাশ্যে আনে কানাডা সরকার। সেই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া হয়। পাশাপাশি এইসমস্ত রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের অন্ধকার ইতিহাস অনুসন্ধানের জন্য গড়ে তোলা হয় একটি বিশেষ কমিটি। ২০১৫ সালে কমিটি তার নিজস্ব রিপোর্ট পেশ করে। সেখানে দেখা যায় বিভিন্ন আবাসিক স্কুল মিলিয়ে মোট ৪১ হাজার শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল ১৮৬৫ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে। তবে এই পরিসংখ্যানও সম্পূর্ণ নয়। কেমলুপ স্কুল থেকে প্রাপ্ত এই সমাধি আবারও সেটাই প্রমাণ করল। আর এর আগে কোথাও একসঙ্গে এতগুলি শিশুর কঙ্কাল পাওয়া যায়নি বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সব মিলিয়ে এর নৃশংসতার কাছে হার মানে অন্য যে কোনো ঘটনাই। ঠিক কবে এই শিশুদের মৃত্যু হয়েছিল, বা একসঙ্গেই সকলের মৃত্যু হয়েছিল কিনা, তা অবশ্য জানা যায়নি। হয়তো জানা যাবে কোনোদিন। কিন্তু যে মায়েদের কোল শূন্য হয়ে গিয়েছিল, সেখানে আর শিশুরা ফিরবে না কোনোদিনই।

আরও পড়ুন
গণহত্যার আরোপেও নিশ্চুপ প্রেসিডেন্ট, মৃত্যুসংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে ব্রাজিল

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আর্মেনিয়ায় গণহত্যা চালিয়েছিল অটোমন তুর্কিরা, বাইডেনের বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক