ঘূর্ণিঝড় তকতের প্রকোপে বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎব্যবস্থা, সঙ্কটে ক্লিনিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন

সোমবার সকালেই গুজরাটের উপকূলে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় তকতে। সেইসময় ঘণ্টায় গতিবেগ ছিল ১৪৪ কিলোমিটার। বিধ্বংসী এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর কতটা ক্ষয়ক্ষতি হবে, তা বোঝার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু এর মধ্যেই নতুন এক আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং গোয়াকে। আর তার কারণ চলমান করোনা অতিমারী। এই সময় স্বাস্থ্য পরিষেবায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অক্সিজেনের। এমনিতেই তার যথেষ্ট জোগান নেই। তার মধ্যে কোনোভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেই ক্লিনিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদনের প্রক্রিয়া পুরোপুরি থমকে যাবে। এখনও অবধি আগে থেকে মজুত রাখা অক্সিজেন দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি কী অবস্থায় দাঁড়ায়, তা কল্পনা করা সত্যিই কঠিন।

মুম্বাই এয়ার সেপারেশন ইউনিটের এক সদস্যের কথায়, কয়েক সেকেন্ডের জন্য বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হলে অক্সিজেন তৈরির কাজ থেমে থাকে ১২-১৪ ঘণ্টা। এমনকি ভোল্টেজের সামান্য ওঠানামাতেও ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত থেমে থাকে উৎপাদন। তবে এমন বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে সবসময় বিদ্যুৎ পরিষেবা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। ফলে সব মিলিয়ে কতদিন উৎপাদন বন্ধ থাকবে, তা আন্দাজ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া মুম্বাই সহ সমগ্র মহারাষ্ট্রের ক্লিনিক্যাল অক্সিজেনের সবচেয়ে বড়ো উৎস জামনগর এলাকার প্ল্যান্টটি। আর সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে ঘূর্ণিঝড়ের বড়ো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

গত সপ্তাহের শেষ দিকেই এই নিয়ে পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রশাসনিক স্তরে। রবিবার দুই রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। সেখানে গুজরাট ও মহারাষ্ট্র থেকে অনুরোধ জানানো হয়, এই জরুরি পরিস্থিতিতে যেন পূর্ব ভারত থেকে উপযুক্ত সাহায্য পাওয়া যায়। এই আবেদনকে মাথায় রেখে ইতিমধ্যে নির্দেশিকা পৌঁছে গিয়েছে ভিলাইয়ের অক্সিজেন প্ল্যান্টে। সেইসঙ্গে ভারতীয় রেলের বেশ কিছু স্পেশাল ট্রেন তৈরি আছে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য। তবে এখন যখন সমস্ত রাজ্যের অক্সিজেনের আকাল, তখন অন্য রাজ্য থেকে কতটা সাহায্য পাওয়া যাবে তাই নিয়েও দুশ্চিন্তা থেকে যায়। ফলে যতদূর সম্ভব, রাজ্যের নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগাম সতর্কতার জন্য কোনোভাবেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হবে না বলে জানিয়েছে দুই রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তর। তবে আবহাওয়া দপ্তরের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখবেন তাঁরা। যাতে ঠিক বিপদের সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যায়। এর ফলেও উৎপাদন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে অনেকটাই। আর তার ফলে মৃত্যুমিছিল যে আরও অনেকটাই বাড়বে, এই আশঙ্কা থেকেই যায়।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কলকাতা ও শহরতলিতে অক্সিজেনের কালোবাজারি চরমে, সাক্ষী খোদ ভলেন্টিয়াররা