সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ মালারকোট, পেল পৃথক জেলার স্বীকৃতিও

সুবেদার ওয়াজির খান ধরে নিয়ে গিয়েছেন জোরাওয়ার সিং এবং ফতেহ সিং-কে। তাঁরা দশম শিখ গুরু গোবিন্দ সিং-এর দুই পুত্র। সেটা ১৭০৫ সাল। দিল্লির মসনদে শেষ শক্তিশালী মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব। গুরু গোবিন্দ সিং-এর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মোটেও সুখকর নয়। ফলে তাঁর দুই পুত্রকে যে হত্যা করা হবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই সময় সম্রাটের কাছে দরবার করলেন মালেরকোটের নবাব শের মহম্মদ খান। না, তিনি বেঁচে থাকতে পাঞ্জাবের উপর এই নিপীড়ন মেনে নেবেন না। যে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বীজ তৈরি হয়েছিল, তা নিমেষে নির্মূল হয়ে গেল। নবাবকে আশীর্বাদ করলেন খোদ শিখ গুরু। আর সুফি ধর্মমতে বিশ্বাসী নবাবও সেই আশীর্বাদ মাথা পেতে নিলেন।

শের মহম্মদ খান একা নন, মালেরকোট শহরের ইতিহাসে এই সম্প্রীতির বীজ আরও গভীরে নিহিত। শের মহম্মদের পূর্বপুরুষ হায়দার শেখ ছিলেন এক জনপ্রিয় সুফি সাধক। আজও তাঁর নানা অলৌকিক ক্ষমতার কথা ঘোরে মানুষের মুখে মুখে। আর হায়দার শেখের নামে আজও প্রতি বৃহস্পতিবার বাড়িতে মাটির প্রদীপ জ্বালান সমস্ত হিন্দু, শিখ এবং  ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ। এই ইতিহাসের চর্চা হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কারণ সম্প্রতি পাঞ্জাব সরকার মালেরকোটকে আলাদা জেলা হিসাবে ঘোষণা করেছে। ১৪ মে, পবিত্র ঈদের দিনেই তৈরি হল নতুন প্রশাসনিক কাঠামো। আর তারপরেই পাঞ্জাব সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

আদিত্যনাথের অভিযোগ শুনে রুষ্ট মালেরকোট শহরের সমস্ত মানুষ। এমনকি হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের মানুষরাও ক্ষুব্ধ এমন অভিযোগ শুনে। কারণ পৃথক জেলার দাবি তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছেন। শহর থেকে পূর্ববর্তী জেলা সদরের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। ফলে যে কোনো প্রশাসনিক কাজ সামলাতে যথেষ্ট সমস্যা হত। নতুন জেলা তৈরির পাশাপাশি এখানে মহিলাদের জন্য পৃথক থানা, একটি মহিলা কলেজ এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথাও ঘোষণা করেছে পাঞ্জাব সরকার। মালেরকোট শহরের অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ। তাছাড়া নবগঠিত এই জেলার মধ্যে রয়েছে আহমেদগড় এবং অমরগড় এলাকাও। যেখানে অধিকাংশ অধিবাসীই শিখ ধর্মাবলম্বী। 

ধর্মপরিচয় তাঁদের পারস্পরিক মেলামেশায় বাধা সৃষ্টি করেনি কোনোদিন। দেশভাগের সময় সারা পাঞ্জাব জুড়ে হিংসার আগুন জ্বললেও মালেরকোট শহরের মুসলমানরা ছিলেন নিরাপদ। আবার বাবরি মসজিদ পরবর্তী দাঙ্গার সময়েও গোটা শহরের মানুষ একযোগে পরস্পরের পাশে থাকার ঘোষণা জানিয়েছিলেন। যোগী আদিত্যনাথ আসলে সেই মেলবন্ধনের ইতিহাসকেই অপমান করেছেন বলে মনে করছেন মালেরকোটের মানুষ। আর সেইসঙ্গে অপমান করেছেন তাঁদের এতদিনের পৃথক জেলার দাবিকেও।

আরও পড়ুন
যুবসমাজকে সম্প্রীতি ও সাম্যের পাঠ দিয়ে দেশের সেরা সমাজকর্মী আশরাফ প্যাটেল

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
একই অট্টালিকায় গুরুদুয়ার-মন্দির-গির্জা-মসজিদ, সম্প্রীতির দৃশ্য উত্তরপ্রদেশের লাইব্রেরিতে