একই অট্টালিকায় গুরুদুয়ার-মন্দির-গির্জা-মসজিদ, সম্প্রীতির দৃশ্য উত্তরপ্রদেশের লাইব্রেরিতে

নবাবি শাসন আর দুর্গের দেশ উত্তরপ্রদেশ। সেখানেই প্রাচীন শহর রামপুর। শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে কত না ইতিহাস। আর ভারতের ইসলামিক ইতিহাসের পীঠস্থান রাজা লাইব্রেরি তো আছেই। বিশ শতকের শুরুতে অবশ্য বাড়িটি তৈরি হয়েছিল একটি দুর্গ হিসাবেই। বিরাট অট্টালিকার সামনে এসে দাঁড়াতেই থমকে যেতে হয়। ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক ঐক্যের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। কিন্তু একটিমাত্র অট্টালিকার মধ্যে এমন সহাবস্থান সত্যিই বিরল।

অষ্টাদশ শতকের শেষ দিক থেকেই বিভিন্ন দুর্গের জানলা প্রচলিত ধর্মস্থানের প্রবেশদ্বারের আদলে তৈরি হতে দেখা যায়। এই দুর্গটিতেও তেমনটাই দেখা যায়। দুর্গের দুপাশে দুটি গম্বুজ। তার চারটি তল। কিন্তু প্রতিটি তলের জানলার গঠন আলাদা আলাদা। একেবারে উপরের তলার জানলাটি দেখতে ঠিক গুরুদুয়ারার মতো। তার নিচেরটি হিন্দু মন্দিরের আদলে তৈরি। দ্বিতীয় তলের জানলাটি দেখতে গথিক গির্জার মতো। আর একেবারে নিচের তলাটি ঠিক মসজিদের মতো।

১৯০৪ সালে নবাব হামিদ আলি খান এই দুর্গটি তৈরি করেন। ব্রিটিশ অধীনস্থ ভারতেও তখন বেশ কিছু ছোটো ছোটো স্বদেশি রাজ্য টিকে ছিল। তেমনই একটি রাজ্য ছিল এই রামপুর। নবাব হামিদ আলির আমলে রামপুর হয়ে উঠেছিল হিন্দু-মুসলমান ভারতীয়দের স্বাধীনতার প্রতীক। তাঁর মন্ত্রনা সভাতেও অনেক হিন্দু আমলা স্থান পেয়েছিলেন। আর তাঁর ছেলের নামের মধ্যেও প্রকাশ পেয়েছিল সেই ঐক্যের বার্তাই। ছেলের নাম রেখেছিলেন রাজা আলি খান। তাঁর মন্ত্রনা সভার অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন হিন্দু। আর হবে নাই বা কেন। রামপুরের জনসংখ্যারও তো বেশিরভাগই ছিল হিন্দু।

পিতার তৈরি দুর্গকে গ্রন্থাগারে রূপান্তরিত করেছিলেন রাজা আলি খানই। আর তাঁর নামেই এখন লাইব্রেরির নাম রাজা লাইব্রেরি। যদিও এই লাইব্রেরি তৈরি হয়েছিল আরও বহু আগে। অষ্টাদশ শতকের ঠিক শেষের দশকে। তৈরি করেছিলেন নবাব ফৈজুল্লাহ খান। এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ লাইব্রেরির একটি এই রাজা লাইব্রেরি। সেখানে থরে থরে সাজানো ইন্দো-ইসলামিক সংস্কৃতির নানা নিদর্শন। বেশিরভাগ পুঁথিই অবশ্য উর্দু হরফের। আর সেইসব পুঁথি লিখেছেন রামপুরের শিল্পীরাই।

আরও পড়ুন
যুবসমাজকে সম্প্রীতি ও সাম্যের পাঠ দিয়ে দেশের সেরা সমাজকর্মী আশরাফ প্যাটেল

কোরান-হাদিশ যেমন আছে তেমনই আছে আরব্য রজনীর পুঁথিও। আবার তার সঙ্গেই আছে রামায়ণ অথবা মহাভারতের উর্দু অনুবাদও। তেমনই সংস্কৃত পুঁথিও বিরল নয়। প্রায় প্রতিটি হিন্দু পুরাণের সংস্কৃত পুঁথি আছে সেখানে। রাজা লাইব্রেরির প্রতিটা ধুলোয় যেন মিশে আছে প্রাচীন ভারতের সাম্প্রদায়িক ঐক্যের ছবি। আজকের এই অসহিষ্ণু সময়ে সেই ইতিহাসই তো স্বস্তি দেয়।

Powered by Froala Editor

More From Author See More