বাঘের চোখে কর্নিয়াল সার্জারি, তৈরি হল ইতিহাস

পশু-পাখি হোক কিংবা সামান্য পোকা-মাকড়— সকলের সঙ্গেই তাদের ভাষায় দেদার আড্ডা জমাতে পারতেন তিনি। সারিয়ে তুলতে পারতেন তাদের যে কোনো অসুখ। ডঃ জন ডুলিটল। হিউ লফটিং-এর লেখা সেই গল্পের কথা কে-ই বা না জানে। এবার যেন রূপকথার উপন্যাসের পাতা থেকেই বেরিয়ে এলেন তিনি। সম্প্রতি, বিশ্বে প্রথমবারের জন্য বাঘের জটিল চক্ষু অপারেশন হল কেমব্রিজে। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন বাস্তবের ডুলিটল ডঃ ডেভিড উইলিয়ামস। 

বয়স সতেরো বছর। কেমব্রিজের নিকটবর্তী শাপ্রেথ চিড়িয়াখানায় দর্শকদের অন্যতম আকর্ষণ সুমাত্রান বাঘ রত্না। বেশ কিছুদিন ধরেই রত্না ভুগছিল চোখের সমস্যায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ছানি অপারেশন হয়েছিল তার। তবে তারপরেও অবনতি হতে থাকে দৃষ্টিশক্তির। পরীক্ষা করার পর চিকিৎসকরা শনাক্ত করেন, বাঁ চোখে কর্নিয়াল আলসার হয়েছে রত্নার। 

গৃহপালিত কুকুর কিংবা বেড়ালের ক্ষেত্রে এই রোগের সার্জারি নতুন কিছু নয়। তবে বাঘ-সিংহ কিংবা অন্যান্য ‘বিগ ক্যাট’ প্রজাতির প্রাণীর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি থেকে যায় অনেকটাই। আর সেই কারণেই এর আগে কখনো চিকিৎসকরা সেই সাহস দেখাননি। তবে রত্নাত শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পেরেই এগিয়ে এসেছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন্স ভেটেরিনারি স্কুল হাসপাতালের সার্জন ডঃ ডেভিড উইলিয়াম। এর আগেও ২০১৯ সালে তিনি রত্নার শল্যচিকিৎসা করেছিলেন। 

তবে খুব কিছু সহজ ছিল না এই কাজ। অস্ত্রোপচারের আগে বিগত দু’মাস ধরে তিনি সতর্ক পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন রত্নাকে। প্রতিদিন চোখে দেওয়া হত আইড্রপ। সেইসঙ্গে চলত নিবিড় পরিচর্যাও। তারপর অস্ত্রোপচার করেন ডেভিড। অপারেশন সফল হওয়ার পরেও দু’সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন তিনি সুমাত্রান ব্যাঘ্রটিকে। গত পরশু আবার তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় শাপ্রেথ চিড়িয়াখানায়। বর্তমানে নিজের গুহাতেই রয়েছে রত্না। নতুন করে ফিরেছে তার হারিয়ে যাওয়া সতেজতাও। 

আরও পড়ুন
ছুঁড়ে ফেলা হল বাঘের খাঁচায়, মুক্তিযোদ্ধা সালাহউদ্দিনকে নৃশংস হত্যা পাক-বাহিনীর

ডেভিড জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির অপারেশনের পর থেকেই বর্ণহীনতায় ভুগছিল রত্না। ফলে, দূরত্ব বুঝতেও বেশ অসুবিধা হচ্ছিল তার। আর সেই কারণেই খাঁচার ফেন্সের একটি বাঁশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় রত্নার। পুনরায় আঘাত পায় চোখে। যার পরিণতি হয় কর্নিয়াল আলসার।

আরও পড়ুন
বাঘকে ঘাস খাওয়ানো কিংবা মালা পরানোর ইচ্ছে – অদ্ভুত যে সব পাগলামি কেড়েছে প্রাণ

হুড গ্রাফ্ট পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয় তার চোখে। প্রায় আধঘণ্টা ধরে চলে সেই সার্জারি। ২০৭ পাউন্ডের রত্নার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল বিপুল পরিমাণ চেতনানাশক। তারপরেও আশঙ্কা ছিল, তার ‘ঘুম ভেঙে যাওয়ার’। তবে শেষ অবধি সফল হয় সার্জারি। ঐতিহাসিক এই সাফল্যে রোমাঞ্চিত ডঃ ডেভিড উইলিয়ামসও। বিগ ক্যাট পরিবারের কোনো সদস্যের চোখে এই জটিল অপারেশনের সাফল্যকে তিনি অভিহিত করেছেন ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধজয়’ হিসাবেই। 

আরও পড়ুন
আসতেন জগদীশচন্দ্র, বাঘাযতীন; আগুনের গ্রাসে সারদা দেবীর শেষ ঠিকানার একাংশ

Powered by Froala Editor