আসতেন জগদীশচন্দ্র, বাঘাযতীন; আগুনের গ্রাসে সারদা দেবীর শেষ ঠিকানার একাংশ

সবে সন্ধে নেমেছে কলকাতা শহরে। তার মধ্যেই বিপত্তি ঘটে গেল বাগবাজারে। একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণে বিধ্বংসী আগুন লাগল বাগবাজার বস্তি এলাকায়। ঘড়ির কাঁটায় তখন সাড়ে ছ’টা। দমকলকর্মীদের পৌঁছানোর আগেই আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে নেয় একের পর এক পরিবারের বাসস্থান। এমনকি সেই বিধ্বংসী আগুন থেকে রেহাই পেল না বস্তির পশ্চিমে অবস্থিত সারদা মায়ের বাড়িও।

ভক্তদের সঙ্গে দেখা করতে সারদা দেবী প্রায়শই দক্ষিণেশ্বর থেকে চলে আসতেন কলকাতায়। তবে বেশিরভাগ সময়ই ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেই ফিরতে হত তাঁকে। কারণ কলকাতায় যে কোনো স্থায়ী থাকার জায়গা নেই। সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছিলেন শিষ্যরাই। তাঁরাই সামর্থ্য মতো অর্থ জোগাড় করে বাগবাজারে গঙ্গার কাছেই কিনে ফেলেন একফালি জমি। সেই জমিতে প্রথমে তৈরি হয় টালির চালের একতলা বাড়ি। প্রতিষ্ঠিত হয় বেলুড় মঠের প্রকাশনী ‘উদ্বোধন’-এর কার্যালয়। সেটা ১৯০৮ সাল। 

বছর খানেকের মধ্যেই পাকা হয়ে যায় বাগবাজারের সেই বাড়ি। ১৯০৯ সালে দোতলা নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর ২৩ মে সারদা দেবী পদার্পণ করেন এই বাড়িতে। বাড়ির দোতলার একটি ঘরেই থাকতেন সারদা। সঙ্গে থাকত দক্ষিণেশ্বর থেকে নিয়ে আসা রামকৃষ্ণদেবের ছবি। প্রতিদিন পুজো হত সেই ছবিতেই। ১৯২০ সালের ২১ জুলাই দেহত্যাগের আগে পর্যন্ত এই বাড়িতেই দিন কাটিয়েছেন সারদা দেবী।  

তবে ‘উদ্বোধন’-এর মূল কার্যালয় হলেও জন্মলগ্ন থেকেই এই বাড়ি পরিচিত মায়ের বাড়ি নামেই। বাড়িটির নির্মাণ এমনভাবেই হয়েছিল যাতে ছাদ থেকে সরাসরি দেখতে পাওয়া যায় দক্ষিণেশ্বর মন্দির। সেইসঙ্গে বাড়ির কাছেই সারদা মায়ের গঙ্গাস্নানের জন্য নির্মিত হয়েছিল একটি ঘাট। যা পরিচিত ‘মায়ের ঘাট’ নামে।

তবে শুধু সারদা দেবীই নন, এই বাড়িতে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন ভগিনী নিবেদিতাও। এমনকি মায়ের বাড়ির মূল মন্দিরের চাঁদোয়াটি নিজের হাতে তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, জগদীশ চন্দ্র বসু, অবলা বসু, গিরীশ ঘোষের মতো ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বসুরাও ছুটে আসতেন মায়ের কাছে। দরজা খোলা থাকত সকলের জন্যই। মানসিক শান্তি পেতে দু’দণ্ড কাটিয়ে যেতেন বাগবাজার অঞ্চলের পতিতারাও। সবার যন্ত্রণার কথাই শুনতেন মা সারদা।

সন্ধের অগ্নিকাণ্ডে ‘উদ্বোধন’ কার্যালয়ের একাংশে আগুন লেগে যায়। প্রাথমিকভাবে খবর, কার্যালয় লাইব্রেরির কিছু বই এবং কম্পিউটার ভস্মীভূত হয়ে গেছে আগুনে। তবে পুরো বাড়িতে সেই আগুন ছড়ায়নি বলেই জানা যাচ্ছে। তবে সমগ্র বাগবাজার বস্তি অঞ্চলে এখনও আয়ত্তে আসেনি পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দমকলের ২০টি ইঞ্জিন। আগুন নেভাতে হাত লাগিয়েছেন আশ্রমের মহারাজ এবং স্থানীয় মানুষরাও...

আরও পড়ুন
অষ্টমীর বেলুড় মঠ; ‘জ্যান্ত দুর্গা’ সারদামনির পুজো করলেন বিবেকানন্দ

Powered by Froala Editor