ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী অগ্নিকাণ্ড, এখনও অনিশ্চিত বাঘজানের ভবিষ্যৎ

আসামের তিনশুকিয়া জেলার বুকে বেশ বড়োসড়ো একটা তৈলখনি। বাঘজান। নামটা এতদিনে সারা দেশের মানুষ জেনে গিয়েছেন। আজ থেকে ঠিক ৫ মাস আগে সেখানে আগুন লাগে। দেখতে দেখতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের বনভূমিতেও। তখনই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এত বড় অগ্নিকাণ্ড ভারতের ইতিহাসে আগে কোনোদিন ঘটেনি। আর তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবে তারপর অন্যান্য নানা ঘটনার টানাপোড়েনে চাপা পড়ে যায় সেই অগ্নিকাণ্ডের খবর। কিন্তু আজ ৫ মাস পরেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সমানে জ্বলছে বাঘজানের আগুন।

স্থানীয় সূত্রে বলা হয়, মে মাসের ২৭ তারিখ খনিতে আগুন লাগে। সেদিন থেকে আজ অবধি হিসাব করলে ১৬১ দিন কেটে গিয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে খবর পৌঁছয় ৯ জুন। অর্থাৎ আগুন লাগার ঠিক ১০ দিন পর। তাহলেও ১৫১ দিন। অথচ ৫ মাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসা তো দূরের কথা, তার কোনো সম্ভাবনাও তৈরি হয়নি। ১৯৬০ সালে আসামেরই শিবসাগর জেলায় একইরকম অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। সেবার যদিও ৯০ দিনের মাথায় আগুন নেভানো গিয়েছিল। তবে এবার সত্যিই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে আধিকারিকদের কপালে। এত দীর্ঘ সময় জ্বলতে থাকা অগ্নিকাণ্ড ভারতে আগে ঘটেনি।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমেই হাত দেয় অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের বিশেষজ্ঞ দল। তাতে লাভ হয় না কিছুই। বরং আগুন দেখতে দেখতে আরও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে আসা হলে, তাঁরাও সফল হননি। আগুন নেভাতে গিয়ে ৭ জন নির্বাপণ কর্মীর মৃত্যুও ঘটে। এরপর খনিতে সরাসরি অগ্নিনির্বাপক তরল ঢেলে দেওয়া থেকে শুরু করে আরও নানা ধরনের চেষ্টা করা হয়। এখন স্নাবিং পদ্ধতিতে আগুন নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করছে অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড। তাঁদের দাবি, এতে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে সেই কথাতেও আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকেই।

এর মধ্যেই আবার চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে ন্যাশানাল গ্রিন ট্রাইবুনালের রিপোর্ট। প্রাথমিকভাবে অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের পক্ষ থেকে অগ্নিকাণ্ডের জন্য কর্মচারীদের গাফিলতিকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি এনজিটি জানিয়েছে যে বাঘজান তৈলখনি তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে। এরকম নির্মাণে আগুন লাগা কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। এমনকি তার ফলে যে আশেপাশের পরিবেশ এবং প্রাণীজগতের অস্তিত্বও সংকটে পড়েছে, সেটা তো দেখাই যাচ্ছে। আর এনজিটির রিপোর্টে আরও উল্লেখ আছে যে, আসামের বুকেই আরও ২৬টি এমন তৈলখনি আছে, যাতে যেকোনো মুহূর্তে আগুন লাগতে পারে। সেই আগুন বাঘজানের থেকেও ভয়াবহ হতে পারে। একটু উপযুক্ত পরিকাঠামো নিয়ে খননের কাজ শুরু করলে হয়তো কিছুটা বেশি বিনিয়োগ করতে হত। কিন্তু এই দুর্ঘটনার হাত থেকে তো রেহাই পাওয়া যেত। এই ধরনের নির্মাণের বিষয়ে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব কার? প্রশ্ন উঠছে তাই নিয়েও।

আরও পড়ুন
এখনও আগুন জ্বলছে অসমের বাঘজানে, বহু বন্যপ্রাণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দু’সপ্তাহ ধরেই ছড়াচ্ছিল প্রাকৃতিক গ্যাস, এবার বিধ্বংসী আগুন অসমের বাঘজানে