দু’সপ্তাহ ধরেই ছড়াচ্ছিল প্রাকৃতিক গ্যাস, এবার বিধ্বংসী আগুন অসমের বাঘজানে

একের পর এক বিপর্যয় ক্রমাগত থাবা বসিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় ভূখণ্ডে। প্রকৃতির ধ্বংসলীলার পাশাপাশি মানুষের অসতর্কতাও ডেকে আনছে নিত্যনতুন দুর্যোগ। বিগত ১৪ দিন ধরেই অসমের বাঘজান এলাকায় তৈলখনি থেকে নির্গত হচ্ছিল প্রাকৃতিক গ্যাস। আশেপাশের অঞ্চলে এই গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় প্রাণ গিয়েছিল একটি ডলফিনের, এমন ছবিও সামনে এসেছিল। এবার সেই তৈলকূপ থেকেই ছড়িয়ে পড়ল বিধ্বংসী আগুন।

মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৪০মিনিট নাগাদ আগুন লাগে ইন্ডিয়ান অয়েলের ওই তৈলখনিতে। প্রায় চার কিলোমিটার দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল আগুনের লেলিহান শিখা। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় বাঘজানের আকাশ। কীভাবে আগুন লাগল তা এখনও স্পষ্ট নয় ইন্ডিয়ান অয়েলের আধিকারিকদের কাছে। তবে ক্রমাগত বাড়ছে প্রজ্বলনের পরিধি। 

বাঘজান এলাকার এই তৈলকূপটি পরিত্যক্ত। তার কাছেই ভূপৃষ্ঠের সাড়ে তিন হাজার মিটার গভীর নতুন একটি খনি থেকেই চলছিল গ্যাস উত্তোলনের কাজ। কিন্তু যান্ত্রিক গোলযোগে ২৭ মে পরিত্যক্ত কূপ থেকেই লিক হতে থাকে গ্যাস। সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই এলাকার অন্তত হাজার দুয়েক বাসিন্দাদের। তোড়জোড় চলছিল কূপটি বুজিয়ে দেওয়ার। সেই মতো মোতায়েন করা হয়েছিল বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীও। রবিবার সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞদের একটি দল আনা হয়েছিল পরিস্থিতি সামাল দিতে। কাজও শুরু হয়েছিল সোমবার। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। মঙ্গলবার ধূলিয়াজানে প্রশাসনের সঙ্গে তাঁদের একটি বৈঠক চলাকালীনই আগুন লাগল খনিটিতে। অগ্নিসংযোগের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না কোনো বিশেষজ্ঞই।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে জখম হন ইন্ডিয়ান অয়েলেরই এক অগ্নিনির্বাপক কর্মী। এছাড়া তেমন কোনো হতাহতের খবর নেই। অন্যদিকে এই বিস্ফোরণে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়েছে কাজ। ঘটনাস্থলের দেড় কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আবাসিকদের। পরিবার পিছু ক্ষতিপূরণ হিসাবে তুলে দেওয়া হবে ৩০ হাজার টাকা, জানিয়েছে তৈল-উত্তোলক সংস্থাটি। 

কিন্তু সব ক্ষতিই কি পূরণীয়? এই প্রশ্ন তো থেকেই যায়। কাছেই রয়েছে ডুব্রু সাইখোয়া জাতীয় উদ্যান। মাহুপি মোটাপুং জলভূমি। আগুন যে হারে ছড়িয়ে পড়ছে, নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে প্রভূত ক্ষতিসাধন হবে বনজ সম্পদের। হারিয়ে যাবে হাজার হাজার বন্যপ্রাণ। হয়তো কিছু বিপন্নপ্রায় প্রজাতিও। দু’সপ্তাহ আগে বিঘ্নিত হতে শুরু করেছিল প্রাকৃতিক ভারসাম্য। এই ঘটনা হয়তো এবার সেই কফিনেই শেষ পেরেক মারতে চলেছে, এমনই আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।

Powered by Froala Editor