অস্কারের মঞ্চে ইতিহাস গড়লেন মিয়া নীল; বঞ্চিত চ্যাডউইক বোসম্যান

“এই মঞ্চে দাঁড়াতে পেরে আমি গর্বিত। অচলায়তন ভেঙে প্রশস্ত হল ভবিষ্যতের পথ। আগামীতে কৃষ্ণাঙ্গ রূপান্তরকামী, আদিবাসী মহিলা, এশিয়ার বোনেরাও ছিনিয়ে নেবেন এই মঞ্চ, এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ আশাবাদী আমি। স্বাভাবিকভাবেই সেই জয় আসতে বাধ্য।”

অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড জেতার উন্মাদনাতেও এতটুকু ঢাকা পড়ে গেল না দৃপ্ত কণ্ঠ। অস্কারের মঞ্চে দাঁড়িয়েই কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয় বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সরব হলেন মিয়া নীল। সত্যিই এই জয় ঐতিহাসিক। ‘মেক আপ এবং হেয়ারস্টাইল’ বিভাগে এই বছর অস্কার পেলেন তিনি। সেইসঙ্গে জেমিকা উইলসন এবং সার্জিও লোপেজও এই কৃতিত্বের অংশীদার। তাঁদের কথাও উল্লেখ করতে ভুললেন না মিয়া। বিজয়ীরা প্রত্যেকেই কৃষ্ণাঙ্গ। আর সেখানেই তৈরি হল নতুন ইতিহাস। এই বিভাগে এর আগে কখনও সম্মানিত হননি কৃষ্ণাঙ্গ মহিলারা। 

গত বছর প্রকাশিত ‘মা রেইনি’স ব্ল্যাক বটম’ চলচ্চিত্রটি পাঁচটি পৃথক বিভাগে মনোনয়নপত্র পেয়েছিল অস্কারের। শেষ পর্যন্ত তা বাজিমাত করল দুটি বিভাগে। মেক-আপের পাশাপাশি ‘কস্টিউম ডিজাইন’ বিভাগে পুরস্কার পেলেন অ্যান রথ। বয়স্কতম অস্কারজয়ী মহিলা হিসাবে রেকর্ড তৈরি করলেন তিনিও।

কিংবদন্তি কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী মা রেইনিকে নিয়েই তৈরি হয়েছিল চলচ্চিত্রটি। মার্কিন সমাজ, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য এবং বর্ণবাদ ছত্রে ছত্রে প্রতিফলিত হয়েছে এই সিনেমায়। এই চলচ্চিত্রই হয়ে উঠেছিল নিঃশব্দ এক প্রতিবাদের ভাষা। সেই কথাটাই আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন মিয়া নীল। সেইসঙ্গে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলতে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয় বিদ্বেষকে বিঁধলেন কড়া সুরে।

আরও পড়ুন
ইরফান-সুশান্ত-ঋষিকে শ্রদ্ধার্ঘ অস্কার কমিটির, স্মরণে ভানু আথাইয়াও

নিজেও একাধিকবার বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন তিনি। কখনো আবার শিল্পের জন্য দাম পাননি উপযুক্ত। কারণ, তিনি কৃষ্ণাঙ্গ। অস্কারের মঞ্চে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন নীল। জানান, তাঁর বৈষম্যের এই ঘানি টানতে হয়েছিল ঠাকুর্দাকেও। স্নাতকোত্তর পড়াশোনার সময় হোস্টেলে জায়গা দেওয়া হয়নি তাঁকে। পরবর্তীতে শিক্ষকের চাকরি পাওয়ার পরেও, কৃষ্ণাঙ্গ বলে তাঁকে দায়িত্ব দিতে অস্বীকার করেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। চলচ্চিত্র-জগতের সর্বোচ্চ সম্মান তাঁকেই উৎসর্গ করেন নীল।

আরও পড়ুন
অস্কারের বিপুল আয়োজন সত্ত্বেও কি ব্যর্থতার মুখ দেখবে হলিউড?

কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছিল একটি অনলাইন ক্যাম্পেনিং। ‘ব্ল্যাক উইমেন ডিফাইন বিউটি’। কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতি, স্টাইল এবং ট্রেন্ড নিয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছিল এভাবেই। তবে আন্তর্জাতিক স্তরে কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতি বা স্টাইল স্টেটমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা যে কোনো অংশ কম নয়, সেটাই এবার প্রমাণ করে দিলেন মিয়া নীল।

আরও পড়ুন
অস্কারের মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করবেন প্রিয়াঙ্কা-নিক জুটি, উচ্ছ্বসিত অভিনেত্রী

তবে এসবের মধ্যেও গোটা বিশ্বের সিনেমাপ্রেমীদের খানিকটা বিষণ্ণ করেছে চ্যাডউইক বোসম্যানের অস্কার না পাওয়া। ‘মা রেইনি’স ব্ল্যাক বটম’ চলচ্চিত্রের জন্যই মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। এটাই ছিল তাঁর অভিনীত শেষ ছবি। এই চরিত্রটির জন্য সেরা অভিনেতা হিসাবে একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন বোসম্যান। পুরস্কার ঘোষণার ঠিক আগে পর্যন্তও চলচ্চিত্র সমালোচকরা এক প্রকার নিশ্চিত ছিলেন এই পুরস্কার পাচ্ছেন তিনিই। তবে শেষ অবধি সেরা অভিনেতার পুরস্কার উঠল অ্যান্টোনি হপকিনসের হাতে।

চ্যাডউইক বোসম্যান এই পুরস্কার পেলে, তিনিই হতেন মরণোত্তর অস্কারজয়ী প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা। কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না। এমন বিস্ময়কর সিদ্ধান্তের জন্য অস্কার বিচারকদের বিঁধেছেন দর্শকদের একাংশ। কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন বর্ণবৈষম্যেরও। তবে পুরস্কার পাওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রয়াত অভিনেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান অ্যান্টোনি হপকিনস। এই পুরস্কার জয়ের কথা স্বপ্নেও ভাবেননি, এমনটাই জানান তিনি। এমনকি তিনি উপস্থিত ছিলেন না অস্কারের মঞ্চেও। তবে এ কথা ঠিক, অস্কার না পেলেও বোসম্যানের অনবদ্য অভিনয় নিঃসন্দেহে জায়গা করে নিয়েছে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে। এও এক বড়ো জয়…

Powered by Froala Editor