তখন মধ্যরাত। ঘড়ির কাঁটা সবে তিনটের অঙ্ক পার করেছে। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে এসে নামল স্পেস-এক্স এর যাত্রীবাহী ক্যাপসুল রেজিলেন্স। নাসা এবং স্পেস-এক্স এর এই যৌথ অভিযানের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীরা। ১৯৬৮ সালের পর এই প্রথম কোনো মার্কিন মহাকাশযান সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে পৃথিবীতে নামল। এই অভিযানের সাফল্য আগামীদিনে মহাকাশ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
১৯৬৮ সালে নাসার অ্যাপোলো-৮ প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে নেমেছিল সূর্য ওঠার আগেই। বড়ো ধরণের কোনো বিপত্তি না ঘটলেও নাসার পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কঠিন হয়েছিল সেইবার। বহুক্ষণ পর্যন্ত মহাকাশচারীদের বের করে আনার কোনো কাজই করা যায়নি। পৃথিবীতে নেমে আসার পরেও ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত তাঁদের থাকতে হয়েছিল অ্যাপোলো-৮-এর মধ্যেই। এরপর থেকে তাই সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে এমন অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়নি নাসা। সময় হিসাব করে প্রতিটা মহাকাশযান নেমেছে সূর্যের আলো থাকতে থাকতেই। এমনকি আর কোনো মহাকাশযানকে জলভাগেও নামানো হয়নি। যদিও মহাকাশযান মাটিতে নামুক বা জলে, বিপদের আশঙ্কা একইরকম থাকে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
অবশেষে এলন মাস্কের স্পেস-এক্স সংস্থার সঙ্গে মিলে নাসা আবারও পরীক্ষামূলকভাবে রাতে মহাকাশযান নামানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল গতবছরেই। আর জানুয়ারি মাস থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল যাবতীয় প্রস্তুতি। অবশেষে ২ মে আবারও ইতিহাস তৈরি হল। তিন মার্কিন মহাকাশচারী এবং এক জাপানী মহাকাশচারী রাতের অন্ধকারেই ঘুরে এলেন স্পেস-স্টেশন থেকে। সূর্য ডোবার পর, সন্ধ্যা ৬:২৬-এ রওনা হয় ক্রিউ ড্রাগন রেজিলেন্স। মোটামুটি ৮:৩৫ নাগাদ তাঁরা পৌঁছান স্পেস-স্টেশনে। এরপর কিছু পরীক্ষানীরিক্ষার কাজ শেষ করতে করতেই বেজে যায় রাত ১০:১৭। ইতিমধ্যেই পৃথিবীকে সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করে তার মহাকর্ষ শক্তির মধ্যে পৌঁছতে বেজে যায় রাত ২টো। আরও এক ঘণ্টা পর তা প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে নামে।
রাত্রিকালিন মহাকাশ অভিযানের পাশাপাশি এই পরীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল স্পেস-এক্স এর রেজিলেন্স ক্রিউ ড্রাগনের নিরাপত্তা প্রমাণ করা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা স্পেস-এক্স ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষকে মহাকাশে ঘুরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা গেছে। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের বুকে তৈরি হয়েছে বিলাসবহুল রিসর্ট। আর সেইসমস্ত যাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার জন্যই ব্যবহার করা হবে এই রেজিলেন্স ক্যাপসুল। অবশ্য নাসাও চুক্তির ভিত্তিতে এই মহাকাশযান ব্যবহার করবে বলে জানানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ২ মে মধ্যরাতে রীতিমতো ইতিহাস তৈরি করল নাসা এবং স্পেস-এক্স।
আরও পড়ুন
১০০ বছরের জন্য উল্কা-হানা থেকে নিরাপদ পৃথিবী : নাসা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মঙ্গলে সংরক্ষিত রয়েছে ৩০-৯৯ শতাংশ জল, জানাল নাসার সাম্প্রতিক গবেষণা