বাদ পড়েছে WHO-এর প্রকল্প থেকে, অবশেষে নিজের দেশেই ভ্যাকসিন তৈরির পথে কিউবা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স প্রকল্পে জায়গা পায়নি কিউবা। অথচ দীর্ঘ অতিমারীতে বিপর্যস্ত অবস্থা অর্থনীতির। ভ্যাকসিন কেনা তো দূরের কথা, খাদ্য নিরাপত্তা দিতেই হিমশিম খাচ্ছে কিউবা সরকার। এই পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখাচ্ছেন কিউবার বিজ্ঞানীরাই। দীর্ঘ গবেষণার পর অবশেষে তাঁরা তৈরি করে ফেললেন কোভিড ভ্যাকসিন। এখন অপেক্ষা শুধু ক্লিনিকাল ট্রায়ালের। ল্যাটিন আমেরিকায় তো বটেই, পৃথিবীর কোথাও এত কম জনসংখ্যার কোনো দেশ কোভিড ভ্যাকসিন তৈরির মতো প্রকল্পে হাত দেয়নি। এই উদ্যোগ সফল হলে চিকিৎসাক্ষেত্রে আবারও দৃষ্টান্ত তৈরি করবে কিউবা।

৮০-র দশক থেকেই কিউবার বিপ্লবী সরকার সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে এসেছে দেশের চিকিৎসা পরিকাঠামোতে। গবেষণাতেও একের পর এক সাফল্য অর্জন করেছেন কিউবার বিজ্ঞানীরা। হেপাটাইটিস, টিটেনাস বা মেনিনজাইটিসের মতো মারণ রোগের প্রতিষেধকও তৈরি করেছেন তাঁরা। আর এবার বিজ্ঞানী মারিয়া এলেনা সোটোর হাত ধরে কোভিড ভ্যাকসিন তৈরির পথে কিউবা। এর আগেও তিনি সোবেরানা-০২ এবং আবালা নামে আরও দুটি কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করেছিলেন। তবে তা অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে আশঙ্কা করে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের আগেই বাতিল করে দেয় কিউবা সরকার। সোটোর মতে, কিউবার মতো ছোট দেশে ক্লিনিকাল ট্রায়াল একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ। তাই তার আগেই নানা পরীক্ষানীরিক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়েছে। ফলে কিছুটা বেশি সময় লেগেছে ঠিকই। কিন্তু সোবেরানা-০৩ প্রতিষেধকের কার্যকারিতার বিষয়ে  তিনি সম্পূর্ণ আশাবাদী।

কিউবার পার ক্যাপিটা আয় ৪ হাজার ডলারের বেশি। ফলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশ হিসাবে স্বীকৃত নয়। আর সেই কারণেই স্থান পায়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স প্রকল্পেও। এই অবস্থায় কিউবার নিজস্ব ভ্যাকসিনই একমাত্র ভরসা। ২২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে তার ক্লিনিকাল ট্রায়াল। এখনও অবধি একে নিরাপদ বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। আর খুব তাড়াতাড়ি তা সমস্ত মানুষের উপর প্রয়োগ করা হবে বলেও জানিয়েছে কিউবা সরকার। শুধু তাই নয়, অন্তিম স্বীকৃতি পাওয়ার পর তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটা দেশে বিনামূল্যে প্রতিষেধক পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-কানেল। এই মুহূর্তে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া সফলভাবে শুরু হলেও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি ধুঁকছে। পৌঁছচ্ছে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাহায্যও। এই অবস্থায় কিউবা তার সামাজিক দায়িত্ব পালন করতেও প্রস্তুত। করোনা ভাইরাসকে পরাজিত করে কিউবার অর্থনীতি যে আবার ঘুরে দাঁড়াবে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মডার্না কোম্পানির ভ্যাকসিনে স্বীকৃতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার, জমছে আশঙ্কাও