নাসার মঙ্গল-অবতরণের অন্যতম কাণ্ডারী দুই বাঙালি-সহ চার ভারতীয় বংশোদ্ভূত

কয়েক ঘণ্টা আগেই মঙ্গলের মাটি থুরি জেজেরো ক্রেটার স্পর্শ করেছে পার্সিভারেন্স। ভারতীয় ঘড়িতে তখন রাত ২টো বেজে ২৫ মিনিট। সারা বিশ্ব সাক্ষী থাকল নাসার ঐতিহাসিক মঙ্গল অবতরণের। আর নাসার এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে দুহি বাঙালি-সহ চার ভারতীয় বংশোদ্ভূত গবেষক— স্বাতী মোহন, অনুভব দত্ত, সৌম্য দত্ত এবং যে বলরাম।

চার গবেষকের মধ্যে ইতিমধ্যেই সফল হয়েছেন স্বাতী মোহন এবং সৌম্য দত্ত। হ্যাঁ, মঙ্গলে অবতরণের ক্ষেত্রে দু’জনেরই ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। বাঙালি গবেষক সৌম্য দত্তের নকসা করা প্যারাসুটে চেপেই মঙ্গলের মাটিতে ‘পা’ দিয়েছে পার্সিভারেন্স। অন্যদিকে পার্সিভারেন্সের নেভিগেশন, গাইডেন্স এবং কনট্রোল অপারেশনের প্রধান ছিলেন স্বাতী মোহন। তবে পার্সিভারেন্সের নিয়ন্ত্রণ দেখাশোনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না তাঁর কর্মকাণ্ড। নাসার এই মঙ্গলযানের নির্মাণ ও বিকাশে প্রধান সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তিনিই। সেইসঙ্গে গিএনসি সাবসিস্টেম এবং প্রকল্পের বাকি দলের সঙ্গেও মূল যোগাযোগকারীর ভূমিকাও পালন করতে হয়েছে স্বাতীকে।

তবে মঙ্গল অভিযানেই তাঁর কৃতিত্ব সীমাবদ্ধ নয়। বিগত কয়েক বছর ধরেই নাসা অন্যতম ভরসাযোগ্য বিজ্ঞানী বেঙ্গালুরুর স্বাতী মোহন। মিশন ক্যাসিনি অর্থাৎ শনি অভিযান এবং চন্দ্রযান গ্রিলের মতো একাধিক প্রোজেক্টে এর আগে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৩ সালের শুরুতেই পার্সিভারেন্সের প্রোজেক্টে তাঁর নাম নথিভুক্ত করেছিল নাসা। না, নিরাশ করেননি তিনি। সাত বছরের কঠোর অধ্যাবসায় এবং পরিশ্রমের মাধ্যমেই ইতিহাস স্পর্শ করলেন স্বাতী। তবে এখানেই তো শেষ নয় কর্মসূচির। বরং সবে তো শুরু। এখনও যে ঢের কাজ বাকি পার্সিভারেন্সের। প্যাসিডিনার জেট প্রোপালশান ল্যাবরেটরি থেকেই বর্তমানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাতী মোহন। আসলে আক্ষরিক অর্থেই তাঁকে ছাড়া ‘অচল’ মার্স রোভার।

অন্যদিকে এখনও চাপানউতোর কাটেনি বাকি দুই ভারতীয় গবেষক বেঙ্গালুরের বব বলরাম এবং অনুভব দত্তের। কারণ তাঁদের তত্ত্বাবধানেই মঙ্গলগ্রহে ঘটতে চলেছে অলৌকিক কার্যকলাপ। হ্যাঁ, অলৌকিক বললে ভুল হবে না কিছু। লালগ্রহের অত্যন্ত কম ঘনত্বের বায়ুমণ্ডলেও উড়বে হেলিকপ্টার। এক কথায় যা অসম্ভবই। তবে এই কঠিন চ্যালেঞ্জকেও উতরে যাওয়ার মতো প্রযুক্তি তৈরি করেছেন দুই ভারতীয়।

আরও পড়ুন
মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে পাওয়া গেল জলীয় বাষ্প, উস্কে দিচ্ছে প্রাণের সম্ভাবনাও

‘ইনজেনুইটি’ নামের এই বিশেষ কপ্টারটি নির্মাণের পিছনে রয়েছেন বব বলরাম। এই প্রজেক্টের চিফ ইঞ্জিনিয়ার তিনি। নাসার সঙ্গে কাজ করছেন প্রায় ৩৬ বছর। তবে মঙ্গলে কপ্টার ওড়ানোর প্রথম পরিকল্পনাই এসেছিল গবেষক অনুভব দত্তের মাথা থেকে। বছর তিরিশেক আগের কথা। অনুভবের এই প্রস্তাব তখন অনেকেই নিয়েছিল মজার ছলে। কিন্তু কে জানত মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এরোডাইনামিক্সের বাঙালি গবেষকের সেই নীল নকসাই ভাষা পাবে একদিন? 

আরও পড়ুন
মঙ্গলে হেলিকপ্টার ওড়াবেন বাঙালি-সহ তিন ভারতীয়, ইতিহাসে প্রথম

মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে ভাসিয়ে রাখার জন্য ‘ইনজেনুইটি’-র ভেতরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ভ্যাকিউম চেম্বার। যা ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করবে এই হেলিকপ্টারটিকে। এই প্রযুক্তি পৃথিবীর বুকে তৈরি একইরকম সিমুলেশন পরীক্ষাগারে পাশ করে গেছে আগেই। এখন দেখার আসল পরীক্ষা কতটা দক্ষতার সঙ্গে উতরাতে পারে এই যন্ত্র।

আরও পড়ুন
মঙ্গলের লবণাক্ত জল থেকেই মিলবে অক্সিজেন, নয়া পদ্ধতি আবিষ্কার ভারতীয় বিজ্ঞানীর

কথা আছে, চলতি এক মাসের মধ্যে পাঁচবার মঙ্গলের আকাশে উড়বে ইনজেনুইটি। প্রতিবার দেড় মিনিটের প্রদক্ষিণ করে নেমে আসবে আবার। কপ্টারের মধ্যেই লাগানো রয়েছে ক্যামেরা। মাথার ওপরে দুটি রোটর। মঙ্গলপৃষ্ঠ থেকে সর্বাধিক ১০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে এই ১.৮ কিলোগ্রামের মিনি হেলিকপ্টারটি। উল্লেখ্য, এর আগে পৃথিবীর বাইরে আর কোনো গ্রহে বা উপগ্রহে ওড়ানো হয়নি হেলিকপ্টার। ঐতিহাসিক এই অভিযান সফল হলে ভবিষ্যতে আকাশ পথেও মঙ্গলের মাটিতে গবেষণা চালানো যাবে বলেই মনে করছেন নাসার তাবড় বিজ্ঞানীরা। সব মিলিয়ে নাসার এই সফলতায় ভারতীয় গবেষকদের জয়জয়ক্কার। আগামী দিনের ইতিহাসে এই চার গবেষকের নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে…

Powered by Froala Editor