স্বাধীন ভারতে এই প্রথম কোনো মহিলার ফাঁসি, মথুরা জেলে ব্যস্ততা তুঙ্গে

মথুরা জেলের আধিকারিকদের মধ্যে এখন ব্যস্ততার শেষ নেই। ১৫০ বছরের প্রাচীন ফাঁসিঘরের দরজা খুলে সমস্ত ব্যবস্থা তদারকির কাজ চলছে। স্বাধীনতার পর থেকে সেই দরজা খোলার প্রয়োজন পড়েনি। কারণ এই ৭৪ বছরে কোনো মহিলার ফাঁসি হয়নি। তবে পরিবারের ৭ সদস্যকে হত্যা করে এবার মৃত্যুদণ্ডের দোরগোড়ায় উত্তরপ্রদেশের শবনম। আর কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো স্বাধীন ভারতের প্রথম মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মহিলার ফাঁসি সম্পাদিত হবে।
কিছুদিন আগেই পেরিয়ে গেল ভ্যালেন্টাইনস ডে। ভালোবাসার উদযাপনে মেতে উঠেছিলেন সারা পৃথিবীর প্রেমিক-প্রেমিকারা। আর এর মধ্যেই শবনমের ফাঁসির প্রস্তুতি এক বিপরীত চিত্র তুলে ধরছে। ভালোবাসা মানুষকে কতদূর নৃশংস করে তুলতে পারে, তারই জলজ্যান্ত উদাহরণ শবনম। ঘটনাটি ঘটে আজ থেকে ১৩ বছর আগে। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাস। অবিবাহিত শবনম তখন সন্তানসম্ভবা। স্থানীয় যুবক সেলিমের সঙ্গে তার সম্পর্ক অনেকদূর এগিয়েছে। কিন্তু দুজনের সামাজিক অবস্থানের মধ্যে যে আকাশপাতাল পার্থক্য।
সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে শবনম। সে নিজে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। ইংরেজি এবং ভূগোল দুটি বিষয়েই তার মাস্টার্স ডিগ্রি রয়েছে। অন্যদিকে সেলিম ক্লাস ৬-এর পর স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে আর্থিক কারণে। নির্মাণ প্রকল্পে দিনমজুরি করে তার দিন চলে। স্বাভাবিকভাবেই শবনমের পরিবার দুজনের সম্পর্ক মেনে নেয়নি। এমন সময় শান্তশিষ্ট শবনমের মধ্যেই দেখা দিল এক বিপরীত চরিত্র।
এক রাতে পরিবারের সবারই দুধের মধ্যে কড়া ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিল শবনম। আর তারপর ঘুমন্ত বাবা-মা, ভাই-বোন, বউদি এমনকি ১০ মাসের ছোট্ট ভাইপো; প্রত্যেকের গলা কেটে খুন করল শবনম। উদ্দেশ্য একটাই। কেউ যেন তার আর সেলিমের সম্পর্কের মধ্যে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়ে শবনম এবং সেলিম। ১০০ দিনের বিচারপ্রক্রিয়ার শেষে আড়মোড়া আদালত রায় দিল। মৃত্যুদণ্ড হল দুজনেরই। এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্টে আপিল করলেও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টে ১১ বছর ধরে বিচার চলার পরেও রায় বদলায়নি।
যদিও এখনও সুপ্রিম কোর্টের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাতে পারে শবনম ও সেলিম। বিশেষ করে তাদের সন্তানের কথা ভেবে সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন মঞ্জুর করতে পারে বলেও মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। আর এই সমস্ত প্রক্রিয়া না মিটলে কারোর ফাঁসি হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে মথুরা জেল কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের ছেলে এখন শবনমের কলেজের বন্ধু উসমান এবং বন্দনার সংসারে বেশ আনন্দেই রয়েছে। গত এক বছরের মধ্যে সেলিম বা শবনমের তরফ থেকে আত্মরক্ষার জন্য আবেদনের বিষয়ে কোনো উৎসাহ দেখা যায়নি। সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত নির্দেশ পেলেই তাই ফাঁসির দিন স্থির করতে প্রস্তুত মথুরা জেল কর্তৃপক্ষ।

Powered by Froala Editor