লাল গ্রহ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। আর প্রতিবেশী গ্রহকে চেনার জন্য, তার অতীতকে জানার জন্যই বার বার একের পর এক অভিযানে ছুটে চলেছে পৃথিবীর যান। কিছুদিন আগেই মঙ্গল নিয়ে এক অজানা তথ্যে উদ্ঘাটন করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলের গায়ে যে উপত্যকা, তার সৃষ্টিই নাকি নদীপ্রবাহে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই সিদ্ধান্তকে আরও খানিকটা পালটে ফেললেন বিজ্ঞানীরা। তথ্যের ভিত্তিতেই।
বিখ্যাত নেচার জিওসায়েন্স পত্রিকায় এই নতুন গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে গত সোমবার। নদীর জন্য নয়, বরং হিমবাহের প্রবাহেই মঙ্গলে শরীর জুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল ক্ষতের। যা আজ উপত্যকা হিসাবেই লক্ষ্য করি আমরা। হ্যাঁ, মঙ্গলে একসময় ছিল হিমবাহই। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানালেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীতে হিমবাহের প্রবাহে যে উপত্যকাগুলির সৃষ্টি তাদের সঙ্গে মঙ্গলের প্রায় ১০ হাজার উপত্যকার বৈশিষ্ট হুবহু মিলে যায় বলেই দাবি করছেন কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী।
কানাডার আর্কটিক অঞ্চলে ডেভন আইল্যান্ডও এমনই একটি হিমবাহের প্রবাহের ফলে তৈরি উপত্যকা। এই উপত্যকার সঙ্গেই লাল গ্রহের মিল থাকায় সম্প্রতি এর নামও দেওয়া হয়েছে ‘পৃথিবীর মঙ্গল’ বা ‘মার্স অন আর্থ’। সেখানেই আয়োজিত হতে চলেছে নাসার স্পেস ট্রেনিং মিশনও।
তবে মঙ্গলে জলের অস্তিত্বের কথা একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণার এক বিজ্ঞানী মার্ক জেলিনেক জানান, ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে আরোই ঠান্ডা ছিল মঙ্গল। তবে যত বদল হয়েছে মঙ্গলের আবহাওয়া, হিমবাহের চাদরের তলায় গলতে শুরু করেছে জল। তাই এমন কিছু চিহ্ন পাওয়া যায় মঙ্গলের উপত্যকায় যা কেবলমাত্র জলের দ্বারাই সৃষ্ট।
আরও পড়ুন
আগামী দশকেই মঙ্গলে পা রাখতে চলেছে মানুষ, তৈরি হতে পারে মহাজাগতিক উপনিবেশ
মঙ্গলের ইতিহাসের প্রথম ১ বিলিয়ন বছরের মধ্যেই সম্ভাবনা ছিল প্রাণের অস্তিত্বের। এমনকি বিজ্ঞানীদের দাবি এই হিমশীতল উষ্ণতা আরও প্রাণের উপযোগী করে তুলেছিল মঙ্গলের চরিত্রকে। উপরের বরফের চাদর যেমন তলায় জলের জীবদের সুরক্ষাপ্রদান করত, তেমনই চৌম্বকক্ষেত্র না থাকায় সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মিদেরও আটকাত এই বরফের স্তূপ। ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক জানাচ্ছেন এমনটাই।
আরও পড়ুন
একসময় মঙ্গলগ্রহের বুকে প্রবাহিত হত নদী, প্রমাণ দিলেন বিজ্ঞানীরা
এ বিষয়ে আরও বিস্তৃত তথ্য দিতে পারবে নাসার সদ্য পাঠানো মঙ্গলযান। প্রাণের অস্তিত্ব জানার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতেই নাসার এই উদ্যোগ। তবে এই যান মঙ্গলে পৌঁছাবে ২০২১-এর ফেবরুয়ারিতে। তারপর তার পাঠানো তথ্যের বিশ্লেষণ এবং গবেষণা করতে সময় লাগবে আরও কয়েকবছর। সবমিলিয়ে সেই রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য কমপক্ষে ২০৩০ সাল অবধি অপেক্ষা করতেই হবে মানব সভ্যতাকে...
আরও পড়ুন
একই বছরে মঙ্গলে নামবে তিনটি পৃথক দেশের রোভার
Powered by Froala Editor