মহাকাশের বুকে নাসার নতুন ইতিহাস, মঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু রোভার ও হেলিকপ্টারের

‘মঙ্গলগ্রহে মানুষ থাকে না...’ বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দুর এই লাইন নিছক মজার বশেই লেখা। কিন্তু মঙ্গলে মানুষ সত্যিই থাকে কিনা, প্রাণের অস্তিত্ব থাকা মঙ্গলে আদৌ কতটা সম্ভব - এসব নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর। নাসার ‘মার্স ২০২০’ মিশনটিও এরই নামান্তর। যে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত পারসিভারেন্স রোভার এবং ইনজিনিউটি হেলিকপ্টারের সফল উৎক্ষেপণ সম্ভব হল এবার।

নাসার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের মার্স মিশন স্পেসক্র্যাফটির ১০০% সফল উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে ২০২১-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করবে এটি। নাসা প্রধান জিম ব্রাইডেনস্টাইন আগেই জানিয়েছিলেন, এই ২ ঘণ্টার উৎক্ষেপণের সময়টি কোনো কারণে নষ্ট হলে পরবর্তী উৎক্ষেপণের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে ২০২২ অব্দি। কেননা মঙ্গল, পৃথিবীর সবথেকে কাছাকাছি আসে ২৬ মাসে একবার। এর অর্থ ছিল, যদি কোনো কারণে ব্যর্থ হত উৎক্ষেপণ, এই রোভার এবং হেলিকপ্টারের সংরক্ষণের জন্যে খরচ হত বিপুল পরিমাণ অর্থ। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। যা নাসার বাজেটের পক্ষে ছিল যথেষ্টই বেশি।

জানা গেছে, এই পারসিভারেন্স রোভার এবং ইনজিনিউটি হেলিকপ্টারটি মঙ্গলের মাটি ছোঁবে প্রায় ৬৮৭ দিন পর। নাসার এই মিশনটির মূল উদ্দেশ্য হল মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজা। যদি থেকে থাকে তাহলে তা ছিল কিভাবে, আর যদি বর্তমানেই থাকে প্রাণের অস্তিত্ব তাহলে তা কীভাবে রয়েছে। সেই নমুনাই সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠাবে এটি, কিন্তু তার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৬ অব্দি। 

পারসিভারেন্স রোভারটি সিলড টিউবেও(বাতাস বা কোনো গ্যাস প্রবেশ করতে পারবে না এমন টিউব) নমুনা সংগ্রহ করে রাখবে। পরবর্তীকালে মানুষবাহী কোন মিশন গেলে, সংগ্রহ করা যাবে সেটি। এই রোভারটিতে রয়েছে ২৩টি ক্যামেরা, ২টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোফোন যা মঙ্গলের বাতাসের শব্দকেও ধরে রাখতে পারবে। অ্যালেক্স মাথার নামে ভার্জিনিয়ার এক মিডল স্কুল স্টুডেন্ট নাম দিয়েছে এই রোভারের। যা পরে ঠিক হয়েছে অনলাইন কনটেস্টের ভোট মারফত।

ইনজিনিউটি হেলিকপ্টারটি একটি প্রথম মিনি হেলিকপ্টার, যা মঙ্গলের নিম্নচাপেও উড়তে সক্ষম হবে। চলবে সোলার এনার্জিতে। আর ভয়ঙ্কর ঠান্ডায় যাতে তার কলকব্জা বিগড়ে না যায়, তার জন্যে এর গোটা বডিটাই রয়েছে ইনসুলেটেড।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে নাসার হাত ধরে নতুন কোন ‘মঙ্গল’-কাব্য রচিত হয় কিনা, তার দিকেই চোখ এখন সমস্ত বিশ্ববাসীর।  

Powered by Froala Editor