সংক্রমণে নতুন রেকর্ড রাজ্যে, বাড়ল মৃতের সংখ্যাও; লকডাউনে ফলাফল শূন্য?

বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই রাজ্যে দৈনিক আক্রন্তের সংখ্যা ২ হাজার ১০০ থেকে ২০০-র মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। অনেক চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরাই মনে করছিলেন হয়তো ক্রমে কমতে শুরু করেছে সংক্রমণ। বাংলা পেরিয়ে গেছে সংক্রমণের চরম শিখর। সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেই বৃহস্পতিবার রেকর্ড সংক্রমণ হল রাজ্যে। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হলেন ২৪৩৪ জন মানুষ। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁল সাড়ে ৬৭ হাজার।

গত সপ্তাহ থেকে প্রতিদিনই কিছু কিছু করে বাড়ানো হয়েছিল কোভিড-১৯ টেস্টের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয় সর্বোচ্চ ১৮ হাজার মানুষের। এই বিপুল সংখ্যক টেস্ট করানোর পরেও পজিটিভিটির হার বৃদ্ধি পেল। বৃহস্পতিবার এই হার ছিল ১৩.৫ শতাংশ। পজিটিভিটি হারের এই নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়া এখন চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের।

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কলকাতার অবস্থা। এক লাফে কলকাতার সংক্রমণ ৬৮৮ থেকে ৭৫০-এ দাঁড়াল এদিন। বেশ খারাপ অবস্থা দুই ২৪ পরগণা, হাওড়া এবং হুগলিতে। মালদহেও ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হলেন ১০০ জন। পাশাপাশি এদিন রাজ্যে মারা গেলেন সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ। শেষ সপ্তাহে দৈনিক গড় মৃত্যুর সংখ্যা ৩৫ ছিল। তা বেড়ে দাঁড়াল ৪৬।

তবে এই পরিস্থিতিতে সামান্য হলেও আশা দেখাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ২৪ ঘণ্টায় তাঁদের লড়াইয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২১৪০ জন মানুষ। সুস্থতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮.৩৩ শতাংশ। যা দেশের গড় সুস্থতার হারের থেকে বেশ খানিকটাই বেশি। গত ২ সপ্তাহে সুস্থতার হারকে প্রায় ১০ শতাংশ বাড়িয়ে আনা, কোভিড যুদ্ধে বড় সাফল্য। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনার সংক্রমণ রুখতে নতুন করে এই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই লকডাউনের পথে হেঁটেছে রাজ্য। আগস্টেও ৯ দিনের সম্পূর্ণ লকডাউনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে আগে থেকে। বাড়ানো হয়েছে টেস্টের সংখ্যা। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে আজ থেকে শুরু হয়েছে অ্যান্টিজেন টেস্টও। কিন্তু তারপরেও মৃত্যুর সংখ্যাকে কমিয়ে আনা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যাও। কড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্যেও এমন সংক্রমণ অবাক করছে বিশেষজ্ঞদের। তবে কি সংক্রমণে কোনোভাবেই পড়ছে না লকডাউনের প্রভাব? মার্চ মাস থেকে সারা দেশে লকডাউন থাকলেও গণ্ডিতে বেঁধে ফেলা যায়নি ভাইরাসকে। আনলক পর্বে সেই সংখ্যা বেড়েছে আরও। চেহারা নিয়েছে গোষ্ঠী সংক্রমণের। দু’দিনের লকডাউনের পরিকল্পনায় বেশ ভরসা নিয়েই হেঁটেছিল প্রশাসন। সম্মতি দিয়েছিলেন সর্বস্তরের বিজ্ঞানীরাও। এই লকডাউনও কি বিফলে গেল? সেই প্রশ্নই আসছে ঘুরে ফিরে। সংক্রমণ আয়ত্তে আনতে নতুন কী নীতি গ্রহণ করে রাজ্য, এখন সেটাই দেখার...

Powered by Froala Editor